Saturday, May 24, 2025
আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতন ইস্যুতে চিন কেন সর্বদা মায়ানমারের পক্ষে?

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মায়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়টিতে সবসময়ই জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের বিরোধী চিন, এবং সর্বদাই তারা মায়ানমারের পক্ষে। এটার কৌশলগত কারণটা আসলে কী? কী তার স্বার্থ?

গত বছরের আগস্ট মাসে রাখাইন প্রদেশে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান ও নির্যাতনের মুখে সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

জাতিসংঘের বিশেষ তথ্য অনুসন্ধানী কমিটির প্রধান মারযুকি দারুসমান বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া এক রিপোর্টে বলছেন, মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে এখনও গণহত্যা চলছে। এখনও যে প্রায় চার লক্ষ রোহিঙ্গা রাখাইনে রয়ে গেছেন – তারা নানা ধরনের অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ নিয়ে যে পদক্ষেপই নিতে চেষ্টা করুক না কেন, তাতে বাধ সাধে স্থায়ী সদস্য চীন, তার সাথে রাশিয়াও। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চিন কেন জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছে? কী তাদের স্বার্থ?

মালয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়না স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলীকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলছেন – চিনের প্রধান স্বার্থ দুটি।

বিবিসি বাংলার মাসুদ হাসান খানকে দেয়া সাক্ষাতকারে ড. আলি বলেন, এর একটি হলো অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার পক্ষে তাদের চিরাচরিত পররাষ্ট্রনীতি – যার পাশাপাশি চিন চায় যে তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও অন্য কোন দেশ হস্তক্ষেপ না করুক।

“আর অপরটি হচ্ছে, তাদের কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ – যার মূল কথা: তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও তেল-গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য মালাক্কা প্রণালী ছাড়াও মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে আরেকটি স্থলপথকে অক্ষুণ্ণ রাখা।”

সৈয়দ মাহমুদ আলির কথায়, “গত দু দশক ধরে চীনের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বাণিজ্য সমুদ্রপথে হচ্ছে। সেই বাণিজ্য মালাক্কা প্রণালী দিয়ে হয় এবং চীন জানে যে তার সাথে শত্রুভাবাপন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আঞ্চলিক মিত্ররা চাইলেই চীনের বাণিজ্য বন্ধ করে দিতে পারে। এটাকেই বলে চীনের মালাক্কা সংকট।”

“এখন বাণিজ্য পথ খোলা রাখার জন্য চীন যদি সেখানে নৌবাহিনী পাঠায় – তাহলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে – যাকে বলে চীনের মালাক্কা ডাইলেমা।”

“সেই মালাক্কা সংকটের কথা মাথায় রেখেই চীন স্থলপথে বিভিন্ন পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল এবং গ্যাস যাতে চীনে পৌছাতে পারে- তার ব্যবস্থা করেছে। এরকম দুটি পাইপলাইন আরাকান অর্থাৎ মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে এসে পৌঁছেছে।

ভারতেরও এ ধরণের বিনিয়োগ রয়েছে কালাদান এবং সিটওয়ে বন্দরে – কিন্তু চীনের অর্থনীতির জন্য এ দুটি পাইপলাইন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

সে জন্যই চীন চাইছে না যে মিয়ানমার সরকার যেন আরাকানের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ হারায়, বা আরাকানকে কেন্দ্র করে চীন-মিয়ানমার সম্পর্ক খারাপ হোক।

তাহলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে আসল চাবিকাঠি কার হাতে?

জবাবে সৈয়দ মাহমুদ আলি বলেন, লক্ষ্য করার বিষয় যে অন্য ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও রোহিঙ্গা বা মিয়ানমার বিষয়ে তাদের নীতি মোটামুটি একই রকম।

তিনি বলেন – “বাংলাদেশ যদি আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারের সাথে এ সংকটের সমাধানে আগ্রহী হয় – তাহলে আমার মনে হয় বাংলাদেশের দুটি বন্ধু রাষ্ট্র ভারত ও চীন – এই দুই রাষ্ট্রের সহযোগিতার মাধ্যমেই মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করা সম্ভব।”

কিন্তু ভারত এবং চীনকে বাদ দিয়ে এ সংকটের সমাধান সম্ভব বলে আমার মনে হয় না – বলেন তিনি। বিবিসি বাংলা