বাংলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সঙ্ঘের শাখা, আসন্ন বিধানসভা ভোটে পদ্ম ফুটবে?
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার ম্যাজিক ফিগারের নিচে নেমে থমকে গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি। অনেকে মনে করছেন, এর পেছনে আরএসএস-এর নিষ্ক্রিয়তা একটি বড় কারণ ছিল। কিন্তু এরপর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে, যেখানে আরএসএস-এর সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কি আরএসএস-এর নেটওয়ার্ককে কাজে লাগাতে চাইছে?
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবারের মতো আরএসএস-এর সদর দফতর নাগপুরে পা রেখেছেন। এই ঘটনাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ, বাংলায় ভোটের অনেক আগে থেকেই বিজেপির সংগঠন তৈরির কাজে আরএসএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতাকে ঢাকতে আরএসএস-এর ভূমিকা আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।
রাজ্যের তিনটি অঞ্চল—উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে মিলিয়ে আরএসএস-এর শাখার সংখ্যা ৩,৫০০ ছাড়িয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনামলে আরএসএস-এর শাখা প্রায় পৌনে ৩,০০০ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গত এক বছরেই ৫৮৩টি নতুন শাখা গঠিত হয়েছে, যা রাজ্যে আরএসএস-এর শক্তিশালী উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
সম্প্রতি আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বাংলায় এসে ১১ দিন ছিলেন। এরপর হাওড়ার উলুবেরিয়ায় দু’দিন ব্যাপী বিশেষ সমন্বয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে রাজ্য বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে বিজেপির অভ্যন্তরীণ একাংশ মনে করছে, জমি প্রস্তুত করলেও, সেই জমিতে বিজেপি ফসল ফলাতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস-এর প্রভাব শুধু রাজনৈতিক দিকেই সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে রাজ্যে ৩৩৬টি স্কুল পরিচালনা করছে আরএসএস, যেখানে মোট ছাত্রসংখ্যা ৮৮,০০০-এরও বেশি। দক্ষিণবঙ্গে বিবেকানন্দ বিদ্যা পরিষদ এবং উত্তরবঙ্গে বিদ্যাভারতী উত্তরবঙ্গ এই স্কুলগুলোর দায়িত্বে রয়েছে।
এখানে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, ২০০৩ সালে দিল্লিতে আরএসএস-এর মুখপত্র ‘পাঞ্চজন্য’-র সম্পাদক তরুণ বিজয়ের লেখা ‘কমিউনিস্ট টেররিজম’ বইটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় তিনি আরএসএস-এর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। যদিও তারপরে গঙ্গার জল অনেকটাই বয়ে গেছে।
বাংলার রাজনীতিতে আরএসএস-এর কৌশল কতটা কার্যকর হয় সেটাই এখন দেখার। তবে আরএসএস মাটি প্রস্তুত করলেও, বিজেপি সেই জমিতে ফলন তুলতে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।