Wednesday, April 23, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে ফের মন্দিরে হামলা, দোলের দিন সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুর

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: আবারও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটল। লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌর শহরের শ্রী শ্রী মহামায়া মন্দিরে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে এক যুবক মুখে রুমাল বেঁধে ঢুকে সরস্বতী প্রতিমার মাথা ভেঙে দেয়। এই ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে।

কীভাবে ঘটল হামলা?

মন্দির কমিটির সভাপতি রবীন্দ্র কর্মকার জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। সেই সময় মন্দিরের পুরোহিত পাশের বাড়িতে পূজা দিতে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে মুখে রুমাল বাঁধা এক যুবক মন্দিরে প্রবেশ করে প্রতিমাটি ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়।

পুলিশ কী বলছে? 

রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। মন্দির সংলগ্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে, একজন যুবক মুখে রুমাল বেঁধে মন্দিরে প্রবেশ করছে এবং প্রতিমা ভাঙচুর করে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে।

অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্য?

পুলিশের দাবি, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির উদ্দেশ্যেই এই প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিমুল সাহা কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, “যারা এই প্রতিমা ভাঙচুরে জড়িত, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

তসলিমা নাসরিনের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “দোলের আগের রাতে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার একটি মন্দিরে ঢুকে সরস্বতী মূর্তি ভেঙেছে মুখে রুমাল বাঁধা লোক। অনুমান করছি লোকটি মুসলমান। মূর্তিটা ভেঙ্গে তার কী লাভ হয়েছে? সম্ভবত ভেবেছে বিধর্মীর মূর্তি ভাঙলে তার বেহেস্তের টিকিট জুটবে।”

হিন্দু নির্যাতন বাড়ছে, প্রশাসন নীরব

গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে।  নভেম্বর মাস থেকে এই হিংসাত্মক কার্যকলাপ চরমে পৌঁছেছে। মন্দিরে হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট ধ্বংসসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা একের পর এক ঘটছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পতনের পর মাত্র ৫ মাসে বাংলাদেশে ধ্বংস করা হয়েছে ১৩৩টি মন্দির। 

চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির ঘটনা 

ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুকে গ্রেফতারের পর থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। এমনকি ইসকনের মন্দিরেও হামলা চালানো হয়েছে। ভারতে এর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় সফরকালে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি বাংলাদেশ সরকারকে সংখ্যালঘু সুরক্ষার বিষয়ে বার্তা দেন। তবুও মন্দির ভাঙচুর ও সংখ্যালঘু নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে।

ইউনুস সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

শেখ হাসিনার পতনের পর মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মন্দিরে হামলার ঘটনা বেড়েছে। সংখ্যালঘু সুরক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সমালোচকরা বলছেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচারের ফলে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে।

নিন্দা ও প্রতিবাদ

সামাজিক ও রাজনৈতিক মহল থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। সংখ্যালঘু সুরক্ষায় প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের উদ্যোগ

পুলিশ ও প্রশাসন জানিয়েছে, হামলাকারীকে দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে এবং মন্দিরগুলোর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। তবে জনগণের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

দোষীদের সাজা দিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ

বাংলাদেশে বারবার মন্দিরে হামলা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ সমাজের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে চরম আঘাত হানছে। যদিও আজ পর্যন্ত দোষীদের সাজা দিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ সরকার।