Thursday, May 9, 2024
সম্পাদকীয়

৫৬৭ বৎসরের পুরনো বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি

সংগ্রাম দত্ত: বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের বানিয়াকান্দি নামক স্থানে অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দির ১৪৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় । 

কিশোরগঞ্জের জেলা শহরের সন্নিকটে যশোদল নামক এলাকার জমিদার কালি কিশোর রায় এর পূর্বপুরুষগণ 

বংশ পরম্পরায় এ মন্দিরে শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজা অর্চনা করে আসছিলেন। 

১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ হলে জমিদার কালীকিশোর রায় এর সন্তানদ্বয় যথাক্রমে সত্যেন্দ্র রায় ও ভূপেন্দ্র রায় ভারতের কলকাতার আলিপুরদুয়ারে চলে যান। 

ভারত ভাগের পর বিভিন্ন সময়ে এ মন্দির নানাভাবে আক্রান্ত হয়। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাক বাহিনী কর্তৃক মন্দিরটির স্থাপনা আক্রান্ত হয়। 

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে পাক বাহিনী মন্দিরের জমির একপাশে বধ্যভূমিতে স্বাধীনতাকামী লোকজনদের নির্মমভাবে হত্যা করে। বর্তমানে ঐ স্থানে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়েছে। 

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদের ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে একদল দুষ্কৃতকারী কর্তৃক মন্দিরে হামলা ও লুটপাট করা হয় বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, প্রথমে একটি টিনের তৈরি ঘরে কালী পূজা হতো। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে মন্দির তৈরি করা হয়। বর্তমানে মন্দিরটিতে পাঁচটি মন্দির রয়েছে। মন্দিরগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ভগবান শিব, শনিদেব, সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ও শ্রী শ্রী সত্য নারায়ণ ও দুর্গা মন্দির । মন্দিরে দৈনিক নিত্য পূজাসহ দুর্গাপূজা, কালীপূজাসহ বিভিন্ন ধরনের পূজা অর্চনা উদযাপিত হয় বলে জানা যায়। 

১৯৯৫ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে তৎকালীন জেলা পরিষদের নির্বাহী সুভাষ সরকারের প্রচেষ্টায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে শেড ঘর নির্মাণ করা হয়।

২০০২ সালে প্রয়াত সভাপতি অজয় কুমার দাস কালী মন্দির, দুর্গা মন্দির ও রাধামাধব মন্দিরের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। যা’ তাঁর মৃত্যুর পূর্বে ২০০৫ সালের মে মাসে মধ্যে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়।

২০০৮ সালে কিশোরগঞ্জের জেলা শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী যথাক্রমে হরিদাস কুমার কৈরী, তপন কুমার কৈরী, স্বপন কুমার কৈরী, অরুন কুমার কৈরী এর অর্থায়নে শিব মন্দির নির্মাণ করা হয়। 

২০১৩-১৬ সালের মধ্যে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নাট মন্দির নির্মাণ করা হয় । এ নাট মন্দির নির্মাণে প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরী নকশা তৈরি ও অর্থসাহায্য প্রদান করেন।

২০২২ সালে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভগবান মহেশ্বর পাঠাগার ও শ্রীমদ্ভগবদ গীতা শিক্ষালয় ভবন এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে।

২০২২ সালে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ির সামনে একটি মার্কেট তৈরি করা হয়। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী দলের এক নেতা মার্কেটে রুম নেয়ার জন্য নানা প্রয়াস নেন বলে জানা যায় । 

অতি সম্প্রতি প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দির, সিদ্ধিদাতা শ্রী শ্রী গণপতি গণেশ মন্দির ও শ্রী শ্রী গ্রহরাজ শনি দেবের মন্দির নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। 

প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কমিউনিটি সেন্টার ও ছাত্রাবাস তৈরির পরিকল্পনা আছে বলে মন্দির কমিটির সম্পাদক শ্রী রতন চন্দ্র দাস জানিয়েছেন। মন্দির কমিটিতে শ্রীমতি লাভলি দাস সভাপতি হিসেবে সফলভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বর্তমানে মন্দিরটি জমিদার কালী কিশোর রায় চৌধুরীর ৬১ শতক জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত । পার্শ্ববর্তী এক প্রভাবশালী ব্যক্তি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া রেকর্ড তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে ২৬ শতক ভূমি দখল করে রেখেছেন বলে জানা গেছে । 

বর্তমানে মন্দিরে দুজন পুরোহিতসহ আরো ৬ জন নিয়োজিত আছেন।