Friday, May 10, 2024
সম্পাদকীয়

অসমীয়া বীর সেনাধিনায়ক লচিত বরফুকানের ৪০১তম জন্মবার্ষিকী

সংগ্রাম দত্ত:

————–

লাচিত ও অহম রাজাদের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস অনেকেই মনে রাখেনি। ভারতীয় ইতিহাসে মধ্যযুগ বা ইসলামী ইতিহাসের বেশি প্রচার পেয়েছে। অথচ অহম রাজাদের কাছে বারবার পরাস্ত হয়েছে মুগলদের পরাক্রম ও বীরত্ব। মুঘলদের ১৭ বার যুদ্ধে পরাজিত করেছিল হিন্দু অহোম সাম্রাজ্য। কিন্তু তার কোনো উল্লেখই নেই ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে। ভারতের ইতিহাসের বেশিরভাগই অংশ গৌরবময়। অথচ বর্তমানে ভারতের পাঠ্যপুস্তকে যা পড়ানো হয় তার ৯৯ শতাংশ দাসত্বের ইতিহাস। 

মুঘলদের সাথে অহম সাম্রাজের যুদ্ধগুলির মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিল সরাইঘাটের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে মুঘলদের হাতে ছিল বিশাল সেনা অন্যদিকে অহম সাম্রাজের সেনাপতি লাচিত বরফুকানের নেতৃত্বে ছিল মুষ্টিমেয় সেনাবাহিনী যাদের কাছে মুঘলদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে অসম ত্যাগ করতে হয়েছিল।

অথচ সাধারণ মানুষ লাচিত বরফুকানকে চেনাতো দূরের কথা নাম পর্যন্ত শোনেনি। কিন্তু ভারতীয় সেনা কতৃপক্ষ আজও এই মহান হিন্দু যোদ্ধাকে সম্মান প্রদর্শন করে। ভারতীয় সেনার অফিসারদের ট্রেনিং পুনেতে হয়। সেখানে লাচিত বরফুকানের স্ট্যাচু বানানো আছে। ভারতীয় সেনার অফিসারদের যখন ট্রেনিং দেওয়া হয়, তখন তাদেরকে লাচিত বরফুকানের বিষয়ে জানানো হয়, যুদ্ধ কৌশল শেখানো হয়।

এই মহান হিন্দু যোদ্ধার জন্ম ২৪শে নভেম্বর ১৬২২ সালে। লাচিত বরফুকান মূলত অসমের বাসিন্দা ছিলেন।

লাচিত বরফুকন ছিলেন আসামের রাজা চক্রধ্বজ সিং ও তাঁর পরবর্তী রাজা উদয়াদিত্য সিং এর সেনাপতি। ১৬৬৯ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব সেনাপতি অম্বররাজ রাম সিংহকে পাঠান অসম রাজ্য জয় করার জন্য। তিনি তাঁর বিশাল সেনা নিয়ে আসামের সীমানায় ছাউনি ফেলেন। এই যুদ্ধ সরাইঘাটের যুদ্ধ নামে খ্যাত এবং ১৬৭১ সালের মার্চের মাঝামাঝি এই যুদ্ধ হয়। 

এদিকে লাচিত বরফুকন জানতেন সম্মুখ যুদ্ধে মুঘলদের পরাজিত করা অসম্ভব। এ জন্য গুয়াহাটি শহরের স্থানে স্থানে তিনি মাটির প্রাচীর নির্মান করেন। গুয়াহাটির সীমানা পাহাড়ে ঘেরা, আর ব্রহ্মপুত্র নদ এখানেই সবচাইতে কম চওড়া, প্রায় এক কিলোমিটার। মুঘলের পক্ষে এই জায়গা ছিল আক্রমনের পক্ষে আদর্শ। কিন্তু লচিত জানতেন নৌযুদ্ধে মুঘলের দুর্বলতা। তাদের বড় তোপ, এসব বহন করা ছিল অসুবিধা জনক। আর লাচিতের বাহিনী ছিল ক্ষিপ্র। তারা প্রথমে আলোচনার আছিলায় যতটা সম্ভব সময় নষ্ট করেন। অবশেষে মোঘল বাহিনীকে নৌযুদ্ধে প্রলোভিত করেন। কিন্তু যুদ্ধের দিন তিনি ভয়ানক অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হন। মোঘল বাহিনী আসাম বাহিনীকে কোন ঠাসা করে ফেলে। এসময় হার অনিবার্য দেখে লাচিত সেই অবস্থায় যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং সেনাবাহিনী পরিচালনা করেন। 

মোঘল বাহিনীর নৌপ্রধান মুনওয়ার খান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। অন্যদিকে লাচিতের উপস্থিতিতে সেনাবাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি পায়। অবশেষে তাঁর নেতৃত্বে আসামের জয় এবং মোগলদের পরাজয় হয়। কুশলী যুদ্ধ-পরিকল্পনাবিদ লাচিত গেরিলা আক্রমণ, স্নায়ুযুদ্ধ ও সময় –এই তিন কৌশলে মুঘলদের কাবু করেন।

প্রতি বছর ২৪শে নভেম্বর অসমে তাঁর স্মরণে “লাচিত-দিবস” রূপে পালন করা হয়।

১৬৭২ সালের এপ্রিল মাসে কালিবোর নামক স্থানে লাচিত বরফুকনের মৃত্যু হয়। এখানে উল্লেখ্য যে ভারত সরকার NDA Cadet দের প্রতি বছর সেরা Cadet কে লাচিত বরফুকন সম্মানে ভুষিত করেন।