কিশোর কুমারের সাড়াজাগানো ১০টি গান
১৯২৯ সালের ৪ আগস্ট মধ্যপ্রদেশের খান্দোয়ায় এক মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে জন্ম নেন কিশোর কুমার। তাঁর বাবা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলি ছিলেন একজন উকিল। তাঁর মার নাম ছিল গৌরী দেবী। আসল নাম আভাস কুমার কাঞ্জিলাল গাঙ্গুলী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
কিশোর কুমার ৪ই আগস্ট ৪টার সময় জন্ম গ্রহণ করেন এবং ৪র্থ সন্তান। তিনি জীবনে ৪ টি বিবাহ করেন, চলচ্চিত্র জীবনে ৪টি বাংলা ফিল্মে অভিনয় করেন। কিশোর কুমার বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, অসমীয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি, মালায়লম, ওড়িয়া, এবং উর্দু। একাধারে ছিলেন গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, প্রযোজক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। প্রথম জীবনে অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলেও গায়ক হিসেবেই তিনি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
কিশোর কুমারের সাড়াজাগানো ১০টি গান
১.
আকাশ কেন ডাকে
মন ছুটি চায়
ময়ূরপঙ্খী মেঘ
ঐ যায় ভেসে যায়।।
দূর থেকে দূর
আরো বহুদূরে
পথ থেকে পথ
চলি ঘুরে ঘুরে
ভাঙা এ মন নিয়ে আমি
একা একা চলেছি কোথায়।।
নীল ভাঙা নীল সুদূর কিনারে
রোদের কারুকাজ মেঘের মিনারে
আমি যে কার কে আমার
সে কথা কি বলবে আমায়।।
২.
সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে
চলে গেছে দিন তবু আলো রয়ে গেছে
সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে।
ভেঙ্গে যাওয়া পাখির বাসার মত মন
কিছু নেই তার বুকে আজ তো এখন।
ডানা মেলে ফিরে কেন আসা তার কাছে
সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে।
যেখানে প্রদীপ ছিল সেখানে আঁধার
নয়নের জল হয়ে ফিরে এল সে আবার।
কোন তারা নেই আজ আকাশের গায়
আলেয়ার আলো এসে আলো দিয়ে যায়
জোনাকিরা কাল রাত ভরে দিয়ে গেছে
সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে।
৩.
আমার পূজার ফুল
ভালোবাসা হয়ে গেছে
তুমি যেন ভুল বুঝোনা ।।
মালা গেঁথে রেখেছি
পরাবো তোমায়
তুমি যেন ছিঁড়ে ফেলোনা
যে কথা যায়না বলা
শুধু বোঝা যায়
মনের গভীরে
শুধু আলো হয়ে রয়ে যায় ।।
সে রঙিন আলোর দ্বীপ কোনদিনও
নিভে যাবেনা।
জানিনা কেমন করে কি দেবো তোমায়
মন ছাড়া আর কিছু নেইতো আমার
সুখের শ্রাবণ যদি মেঘ নিয়ে আসে
ভিজে যাবো অঙ্গনে তোমার বরষায় বসে
বিজলীর আগুনেতে লেখা নাম
কোনদিনও মুছে যাবেনা ।।
৪.
আশা ছিল ভালোবাসা ছিল
আজ আশা নেই, ভালোবাসা নেই।।
এই সেই কৃষ্ণচূড়া যার তলে দাঁড়িয়ে
চোখে চোখ হাতে হাত কথা যেত হারিয়ে।
আজ এখানে আমার আশার সমাধি
ব্যথা জানাবার ভাষা নেই
আশা নেই, ভালোবাসা নেই।।
আজ তুমি কতদূরে মুছে গেছ মরণে
নেই কাছে তবু আছ ব্যাথা ভরা স্মরণে।
ফিরে চলে যায় যে সময় হায় একবার
তার যাওয়া আছে আশা নেই
আজ আশা নেই, ভালোবাসা নেই।।
৫.
চিরদিনই তুমি যে আমার
যুগে যুগে আমি তোমারই ।।
আমি আছি সেই যে তোমার
তুমি আছো সেই আমারই .
সঙ্গী সঙ্গী আমরা অমর সঙ্গী
এত কাছে রয়েছো তুমি
আরো কাছে তোমাকে যে চাই
তুমি ছাড়া এমন আপন
আমার যে আর কেউ নাই ।।
আমি কি গো তোমাকে ছেড়ে
একা একা থাকতে পারি !
সঙ্গী সঙ্গী আমরা অমর সঙ্গী
এ জীবন ফুরিয়ে যেদিন
পাবো এক নতুন জীবন
সেদিনও হবে একাকার
দু’জনার এই দু’টি মন ।।
হৃদয়ের সব কবিতা
ঝরে পড়ে ছন্দ তারে
চিরদিনই তুমি যে আমার
যুগে যুগে আমি তোমারই ।
আমি আছি সেই যে তোমার
তুমি আছো সেই আমারই .
সঙ্গী সঙ্গী আমরা অমর সঙ্গী
৬.
ওগো নিরুপমা
করিও ক্ষমা
তোমাকে আমার ঘরনী করিতে
আমার মনের দোসর করিতে
পারিলামনা তো কিছুতেই।।
হয়তো তোমার অনেক কিছুই আছে
তবু নেই দাম তার কোনই আমার কাছে।
আমার এ পথ তোমার পথের সাথে
মিলবেনা যেন কিছুতেই।।
লতার মত জড়িয়ে রয়েছ গাছে
বুঝি ফুল ফুটবার সময় এসেছে কাছে।
এমন মধুর ভঙ্গিমা আমি কোনদিন
ভুলবোনা যেন কিছুতেই।।
৭.
তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে
আমার মরন যাত্রা যেদিন যাবে
মরন যাত্রা যেদিন যাবে
তুমি বারান্দাতে দাঁড়িয়ে থেকো
শেষ দেখাটা দেখতে পাবে
মরন যাত্রা যেদিন যাবে …
আমায় দেখতে তোমায়
দেয়নি যারা
জানবে না যে কেউ তো তারা
আমি পাথর চখের দ্রিস্টি দিয়ে
দেখব তোমায় বিভোর ভাবে
মরন যাত্রা যেদিন যাবে
তুমি ফুল ছুড়না উপর থেকে
একটু ফেলো দীর্ঘ নিঃশ্বাস
আমার শিওরে জলা ধুপের ধোয়ায়
অটাই হবে সুখের বাতাস
তুমি ফুল ছুড়না উপর থেকে…………
যদি নতুন কোন জন্ম থাকে
পাবো দুজন দুজনাকে
সেদিন নতুন হয়ে আসব কাছে
তখন তোমায় কে আটকাবে
মরন যাত্রা যেদিন যাবে , মরন যাত্রা যেদিন যাবে
তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে
আমার মরন যাত্রা যেদিন যাবে
মরন যাত্রা যেদিন যাবে…………………
৮.
সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা
রঙ ছিল ফাল্গুনি হাওয়াতে
সব ভালো লাগছিল চন্দ্রিমায়
খুব কাছে তোমাকে পাওয়াতে।।
মন খুশি উর্বশী সেই রাতে
সুর ছিল গান ছিল এই প্রাণে
ঐ দুটি হাত ছিল এই হাতে
কি কথা বলছিলে মন জানে
সব ভালো লাগছিল তুমি ছিলে তাই
মন ছিল মনেরই ছায়াতে।।
রাত আসে রাত চলে যায় দূরে
সেই স্মৃতি ভুলতে কি আজ পারি
পুরানো দিন আছে মন জুড়ে
ভালোবাসা হয়েছে ভিখারী
ধূপকাঠি মন জ্বলে একা একা তাই
সেই তুমি নেই তুমি নেই সাথে।।
৯.
একদিন,পাখি উড়ে
একদিন,পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে
ফিরবে না সে তো আর কারও আকাশে ।।
বুকে যেন বাদলের ঐ,মেঘ জমে না
মন ভেঙে দিতে যেন আর,ঝড় আসে না
তারে ভেবে কারও চোখে যেন জল না আসে
কারও আকাশে..
একদিন,পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে
ফিরবে সে তো আর কারও আকাশে ।
উদাসীর বাঁশি আর কেন
কেউ তো শোনে না,কোনদিন কেউ তার কেন
মন তো বোঝে না
ঘর ছেড়ে কোন দিন যেন শেষে,পথে না বসে
পথে না বসে..
একদিন,পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে
ফিরবে সে তো আর কারও আকাশে ।।
১০.
তোমরা যতই আঘাত করো
নেইকো অপমান
শুধু আমায় দাওগো সুযোগ
শোনাতে এ গান
আমার গুরুর নামে আমি
করছি শপথ ভাই
শুধু যে চাই গান শোনাতে
আর কিছু না চাই
ব্যথার ডালি বক্ষে ধরি
গরল করি পান
নাম না জানা অনেক ফুলই
পথের ধারে ফোটে
জীবনটা যায় ঝরে ঝরে
ফুলদানি না জোটে
দু’পায়েতে মাড়িয়ে গেলেও
নেই যে অভিমান