ভারতে আনা হলো মুম্বাই হামলায় অন্যতম মূলচক্রী তাহাউর রানাকে
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই শহরে সংঘটিত জঙ্গি হামলার অন্যতম মূলচক্রী তাহাউর রানাকে অবশেষে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই অভিযুক্ত জঙ্গিকে দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে পেশ করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তার আগে দিল্লির আদালত চত্বরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয়েছে আধা-সামরিক বাহিনী ও দিল্লি পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসাররা। একইসঙ্গে, তাহাউরকে রাখা হতে পারে তিহাড় জেলের একটি বিশেষ সেলে—যেখানে কড়া নিরাপত্তায় সমস্ত প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন জেল কর্তৃপক্ষ।
তবে তাহাউর কবে ভারতে আনা হয়েছে, তাঁকে প্রথমে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে—সেসব বিষয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA) কোনো মন্তব্য করেনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি বিবৃতিতে সংস্থাটি শুধু জানিয়েছে যে, “সাফল্যের সঙ্গে” ৬৪ বছর বয়সি তাহাউর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। এখন তাকে ভারতীয় গোয়েন্দা এবং বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।
‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের বড় জয়’
তাহাউরকে ভারতে ফিরিয়ে আনা নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ও ২৬/১১-র ভুক্তভোগীরা। ওই হামলায় আহত হওয়া দেবিকা নটওয়ারলাল রোটাওয়ান বলেন, “এটা ভারতের একটা বড় জয়। তাহাউরকে জেরা করে পাকিস্তানে থাকা জঙ্গি ও মদতদাতাদের নাম বার করে আনতে হবে। এরপর ওর ফাঁসি হওয়া উচিত।”
একই মত পোষণ করেছেন মুম্বই পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার হেমন্ত বাওধনখড়, যিনি ২৬/১১ হামলার পরে গঠিত বিশেষ তদন্তদলের সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, “এই প্রত্যর্পণ NIA-এর বড় সাফল্য। আমরা আশা করি ওর ফাঁসির রায় হবে। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে কড়া বার্তা দিতে পারব যে, ভারতকে চোখ রাঙালে ফল ভোগ করতেই হবে।”
ভারতের আইনি লড়াইয়ের জয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রত্যর্পণ শুধুই একজন জঙ্গিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ঘটনা নয়। বরং এটা ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক ও আইনি লড়াইয়ের সাফল্যের প্রতীক। ২৬/১১ হামলায় সরাসরি যুক্ত কোনো বিদেশি নাগরিককে প্রথমবার ভারতের মাটিতে এনে বিচার করা হবে—যা এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত।
তাহাউর রানার কাছ থেকে তদন্তকারীরা এমন বহু তথ্য পেতে পারেন, যা প্রমাণ করে দেবে পাকিস্তানের মদতেই এই হামলা সংগঠিত হয়েছিল। এমন তথ্য সামনে এলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তান আরও চাপে পড়বে বলেই ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। সেইসঙ্গে, ভারতের সন্ত্রাস দমন নীতির দৃঢ়তা ও আইনব্যবস্থার কার্যকারিতা বিশ্ব দরবারে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।