বাংলাদেশি সন্দেহে বিরাটিতে গ্রেফতার হওয়া আজাদ আদতে পাকিস্তানি-নাগরিক
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: পাকিস্তানের নাগরিক হয়েও ভারতের পরিচয়পত্র কীভাবে জোগাড় করল আজাদ মল্লিক? এই প্রশ্ন ঘিরে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জাল পাসপোর্ট মামলায় গতকাল ইডি (ED)-র হাতে গ্রেফতার হওয়া আজাদ মল্লিককে প্রথমে বাংলাদেশি নাগরিক বলে সন্দেহ করা হলেও, তদন্তে উঠে এসেছে, আদতে সে পাকিস্তানের নাগরিক। বিরাটিতে থাকা তার বাসস্থান থেকেই তাকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভিসার আবেদন করেছিল আজাদ। এরপর পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এমনকি আধার কার্ডও সংগ্রহ করে ফেলে। শুধু তাই নয়, তার নামে তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে এখন পর্যন্ত ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ED-এর প্রাথমিক অনুমান, লোকদেখানো আমদানি-রফতানি ও মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসার আড়ালে চলত হাওয়ালার মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন।
ইতিমধ্যেই আজাদের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে ED। তদন্তকারীরা জানতে চান, এত বিপুল অর্থের উৎস কী? পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে কীভাবে পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে থাকার অনুমতি পেয়েছিল আজাদ? কারা তাকে সহায়তা করেছে সরকারি পরিচয়পত্র তৈরি করতে?
ED আদালতে জানিয়েছে, আজাদের স্ত্রী ও সন্তান বাংলাদেশের খুলনায় থাকেন। অর্থাৎ, বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে তার। এর আগে ২০২২ সালেও ফরেনার্স অ্যাক্টে এয়ারপোর্ট থানার মামলায় গ্রেফতার হয় আজাদ। তবে তার পরে আবার কীভাবে সে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস শুরু করে, সেটাই ভাবাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে।
ED সূত্রে আরও দাবি, জাল নথি সরবরাহকারী একটি বড়সড় নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল আজাদ। বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য জাল ভোটার কার্ড ও অন্যান্য ভারতীয় পরিচয়পত্র জোগাড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। এই চক্রের পেছনে কারা রয়েছে, কীভাবে এতদিন কার্যত ধরা না পড়ে রয়ে গেল আজাদ — তা জানতেই তদন্তে জোর দিচ্ছে ইডি। এর জন্য ৮ দিনের হেফাজতে নিয়েছে তাকে।
এই ঘটনায় স্পষ্ট, সীমান্ত পার করে অনুপ্রবেশ শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, আর্থিক জালিয়াতির আশঙ্কাও বহুগুণে বাড়িয়ে তুলছে। পাসপোর্ট জালিয়াতি, পরিচয়পত্র দুর্নীতি এবং হাওয়ালা চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগের প্রমাণ মেলায়, কেন্দ্রীয় এজেন্সির তরফে এবার মানি ট্রেল ধরে গোটা চক্রের খোলসা করার চেষ্টায় নেমেছে তদন্তকারীরা।
এই নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।