‘দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সর্বস্তরে চাপ সৃষ্টি করা হবে’, দুর্গাপুরকান্ডে নির্যাতিতার পরিবারকে আশ্বাস ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ওড়িশার এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় এবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি। সোমবার ফোনে নির্যাতিতা ও তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চিন্তা করবেন না, ওড়িশা সরকার আপনাদের পাশে আছে। ধৈর্য রাখুন, সাহস হারাবেন না।”
মোহন মাঝি জানান, নির্যাতিতার চিকিৎসা ও পড়াশোনা যাতে কোনওভাবেই ব্যাহত না হয়, তার জন্য ওড়িশা সরকার সবরকম সাহায্য করবে। তিনি বলেন, “তোমার পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ করা হবে। সর্বস্তরে যোগাযোগ করা হবে।”
কলেজ কর্তৃপক্ষের উপর দোষ চাপাচ্ছেন মমতা
বিরোধীদের অভিযোগ, দুর্গাপুরের এই নৃশংস ঘটনায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী সক্রিয়ভাবে নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়ালেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি। বরং তিনি দোষ চাপিয়েছেন ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের উপর। এই অবস্থান নিয়েই বিরোধী শিবিরের সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সক্রিয় ওড়িশা মহিলা কমিশন
সোমবারই দুর্গাপুরে পৌঁছন ওড়িশা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন শোভনা মোহান্তি। তিনি নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। ঠিক সেই সময়ই ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি। নির্যাতিতার অনুরোধে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি যদি কলেজ পরিবর্তন চান, তবে নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
ওড়িশা সরকার জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই মামলার অগ্রগতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন ওড়িশা মহিলা কমিশনের প্রধান।
কমিশনকে হাসপাতালে প্রবেশে বাধা
ওড়িশা মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল সোমবার দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁদের আটকে দেওয়া হয় হাসপাতালের গেটেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ভেতরে রাজ্যপাল রয়েছেন, তাই বাইরে অপেক্ষা করতে হবে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এক সদস্য বলেন, “আমাদের রাজ্যের মেয়ের সঙ্গে এমন নৃশংসতা হয়েছে, অথচ আমাদের ভেতরে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না।”
রাজ্যপালের প্রতিক্রিয়া
এদিন রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোসও দুর্গাপুরে যান এবং নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, “আমি আক্রান্ত তরুণীর সঙ্গে কথা বলব, তাঁর পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করব। দোষীদের কঠোর শাস্তি হবে।”
রাজ্যপাল রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তবে বলেন, আগে ঘটনাস্থলে গিয়ে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করবেন।
শুভেন্দুর অভিযোগ: “মূল অভিযুক্ত তৃণমূল ক্যাডার”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, এই ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ও পদাধিকারী রয়েছেন। তাঁর দাবি, “মূল অভিযুক্ত দুর্গাপুর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী এবং তৃণমূলের সক্রিয় ক্যাডার। তার বাবা দলের পদাধিকারী। শাসক দলের ছত্রছায়ায় এ ধরনের অপরাধ ঘটছে।”
পুলিশের তরফে নিরাপত্তার আশ্বাস
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সুনীল চৌধুরী জানান, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে পুলিশের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
গত শুক্রবার রাতে দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের বাইরে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে নির্যাতিতার সহপাঠীকেও।


