‘২-১ টা এমন ঘটনা ঘটেই থাকে,’ দুর্গাপুরকাণ্ডে মন্তব্য কাকলি ঘোষ দস্তিদারের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ক্ষোভের ঢেউ। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের মন্তব্য ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, “রিপোর্ট কীভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে, সেটাও দেখতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক দেখানো হচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক দিক, আবার অনেক সময় পরিসংখ্যানও সামনে আসছে। পরিসংখ্যানগতভাবে দেখলে বোঝা যাবে, প্রত্যেক সমাজেই এমন দু’-একটা ঘটনা ঘটে থাকে। বিশ্বে এমন কোনও দেশ নেই যেখানে এমন ঘটনা ঘটে না।”
তবে তিনি একইসঙ্গে যোগ করেন, “আমরা মনে করি এটি অত্যন্ত জঘন্য একটি ঘটনা। দোষীদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।”
এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরই রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিরোধীদের অভিযোগ, এমন এক নৃশংস ঘটনার পর ‘পরিসংখ্যানগত ব্যাখ্যা’ দেওয়া অত্যন্ত অমানবিক ও সংবেদনশীলতাহীন।
এরপর ‘অপরাজিতা বিল’-এর প্রসঙ্গ টেনে সাংসদ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাশ হয়েছে যাতে এই ধরনের ঘটনার দোষীরা কঠোর শাস্তি পায়। কিন্তু কেন্দ্র সেই বিলটিকে অনুমোদন দিচ্ছে না। রাষ্ট্রপতির কাছেই পড়ে রয়েছে সেই বিল। কেন্দ্র যা চায়, রাষ্ট্রপতিজিও তাই করেন।”
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দুর্গাপুর গণধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। কেউই সমর্থন করে না। তবে ওটা একটি প্রাইভেট কলেজ। মেয়েটির নিরাপত্তার দায়িত্ব সেই কলেজেরই। রাত সাড়ে ১২টার সময় কীভাবে মেয়েটি বাইরে গেল, সেটা দেখা দরকার। বেসরকারি কলেজগুলির উচিত নিরাপত্তা আরও জোরদার করা, বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য। রাতে বাইরে বেরোতে দেওয়া উচিত নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন রাজ্যের ছেলেমেয়েদের অনুরোধ করব, রাতে যেন তাঁরা বাইরে না বেরোন। কলেজগুলির দায়িত্ব আছে। পুলিশ তো আর বাড়ি বাড়ি বসে থাকবে না।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিরোধী শিবিরে। তাঁদের দাবি, মেয়েদের ‘রাতে না বেরোনোর’ পরামর্শ দিয়ে সরকার আসলে নারীদের স্বাধীনতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
একদিকে যেখানে রাজ্য সরকার দাবি করছে, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, অন্যদিকে শাসক দলের নেত্রীদের মন্তব্যে প্রশ্ন উঠছে— সরকার কি নির্যাতিতার পাশে দাঁড়াচ্ছে, নাকি ঘটনার দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে?


