Sunday, May 18, 2025
Latestরাজ্য​

এককাপড়ে ঘরছাড়া মুর্শিদাবাদের বহু হিন্দু পরিবার, আশ্রয় নিলেন মালদার স্কুলে

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ, সুতি এবং ধূলিয়ান এলাকা। চোখের সামনে দাউ দাউ করে জ্বলছে সাজানো বাড়ি, দোকানপাট—গোটা অঞ্চল জুড়ে যেন আতঙ্কের ছায়া। প্রাণ বাঁচাতে বহু পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগরের পার্লারপুর হাইস্কুলে। ইতিমধ্যেই সেখানে ঠাঁই নিয়েছে শতাধিক পরিবার। তবে আরও অনেকেই এখনও সামসেরগঞ্জ থেকে গঙ্গা পেরিয়ে মালদহে পৌঁছানোর অপেক্ষায়।

চোখে জল, গলায় আর্তি: বাস্তুচ্যুত মানুষের করুণ ছবি

ধূলিয়ান থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ৫০০ জন মানুষ  বৈষ্ণবনগরের একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তছনছ করা হয়েছে ঘরের জিনিসপত্র। এমনকি জলের ট্যাঙ্কে বিষ মিশিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিএসএফের সহযোগিতায় কোনও রকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছেন তাঁরা।

এক মহিলা আশ্রয়কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমরা খুব দুঃখের মধ্যে এসেছি এখানে। আমাদের বাড়ি নেই, ঘর নেই। সংসারের যা ছিল সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পেট্রোল ঢেলে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। জলের ট্যাঙ্কে বিষ দিয়ে দিয়েছে। আমরা কী খাব, কীভাবে বাঁচব?”

আর এক মহিলা জানান, “ট্যাঙ্ক ভেঙে দিয়েছে। জলও খেতে দেয় না। চাল, মুড়ি, বিস্কুট সব নষ্ট করে দিয়েছে। সকাল থেকে তিনটে ছোটো বাচ্চা না খেয়ে আছে। আমরাও না খেয়ে ছিলাম, এখানে এসে একটু খাবার পেয়েছি। ভয়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছি।”

নৌকা পাঠিয়ে উদ্ধার, মাঝিরা যেতে চাইছেন না সামসেরগঞ্জে

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ ও বিএসএফ নৌকা পাঠিয়ে বহু পরিবারকে উদ্ধার করেছে। তবে এখন আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে, মাঝিরা আর সামসেরগঞ্জ যেতে চাইছেন না। পরিস্থিতি এখনও থমথমে। গঙ্গার ধারে অসংখ্য মানুষ অপেক্ষা করছেন কখন তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছাতে পারবেন।

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, বিরোধীদের কড়া সমালোচনা

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে ভাঙা ঘর, জ্বলন্ত দোকান আর আতঙ্কিত মানুষের আর্তনাদ।

এদিকে, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, “নিরাপত্তা কোথায়? আমাদের রক্ষা করবে কে?”