‘বাংলায় হিন্দুদের পরিস্থিতি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের মতো, ৪ জেলায় সেনাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হোক’, অমিত শাহকে চিঠি সাংসদের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ওয়াকফ (Waqf) সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে ভয়াবহ হিংসায়। গত কয়েকদিন ধরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ জেলা। প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৩ জনের। ভাঙচুর, লুটপাট হয়েছে বহু দোকান ও ঘরবাড়ি। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়িও। বিক্ষোভের আঁচ পৌঁছেছে মালদা, নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। এমন উত্তাল পরিস্থিতিতে ৪টি সীমান্তবর্তী জেলায় সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (AFSPA) জারির দাবি জানালেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। তাঁর এই দাবির কেন্দ্রে রয়েছে হিন্দু জনসাধারণের নিরাপত্তার প্রশ্ন এবং আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা।
উত্তাল মুর্শিদাবাদ, অশান্ত রাজ্য
ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মুর্শিদাবাদে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হিংসা ছড়িয়েছে রঘুনাথগঞ্জ, জলঙ্গি, ভগবানগোলা-সহ একাধিক এলাকায়। হাই কোর্টের নির্দেশে পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিভিন্ন জেলা থেকে আনা হয়েছে অভিজ্ঞ পুলিশ আধিকারিক ও বাহিনী। তবুও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি অবস্থা।
বিজেপির অভিযোগ: ‘তোষণের রাজনীতি’র ফল
পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ অমিত শাহকে লেখা চিঠিতে দাবি করেন, “গত কয়েক সপ্তাহে মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের ৮৬টি বাড়ি ও দোকান লুটপাট ও ধ্বংস করা হয়েছে। খুন হয়েছেন অন্তত দুইজন সাধারণ মানুষ। এমনকি তাঁদের পানের বরজেও হামলা চালানো হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়, বরং মালদা, নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও একই রকম হিংসা ছড়িয়েছে।
তাঁর মতে, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী রাজ্যের ‘তোষণের রাজনীতি’। ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে জনরোষ যে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বেহাল অবস্থাকে সামনে এনে দিয়েছে, তা নিয়ে জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর বক্তব্য অত্যন্ত কড়া।
তুলনা ১৯৯০ সালের কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সঙ্গে
চিঠিতে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা মন্তব্যটি হল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের গণপলায়নের প্রসঙ্গ টানা। মাহাতো বলেন, “এই পরিস্থিতি বাংলার হিন্দুদের ১৯৯০ সালে কাশ্মীরে পণ্ডিতদের ওপর হওয়া অত্যাচার ও গণপলায়নের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।” ফলে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে AFSPA জারি করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তিনি।
কী এই আফস্পা (AFSPA)?
‘Armed Forces (Special Powers) Act’ বা সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন মূলত সেনাবাহিনী বা আধাসামরিক বাহিনীকে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়। এই আইনের আওতায়, বাহিনী কোনও ব্যক্তিকে সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার, গুলি চালানো, তল্লাশি চালানো বা জমি দখলের মতো পদক্ষেপ নিতে পারে কোনও রকম প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই। মূলত সন্ত্রাস বা বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে এই আইন ব্যবহৃত হয়ে এসেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে এবং জম্মু-কাশ্মীরে।