গাজার হাসপাতালে ইজরায়েলের বিমান হামলা, শীর্ষ হামাস কমান্ডারসহ মৃত ৫১
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: সংঘর্ষবিরতি চুক্তি শেষ হওয়ার পর গাজায় ফের শুরু হয়েছে ভয়াবহ বিমান হামলা। রবিবার রাতে দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহরের নাসির হাসপাতালে ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আছেন হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল বারহুম।
হাসপাতাল লক্ষ্য করেই বিমান হামলা
ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, হামাস জঙ্গিরা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে হাসপাতালকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই নিখুঁত বিমান হামলা চালিয়ে ইসমাইল বারহুমকে খতম করা হয়েছে। প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইজরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
হামাসের শীর্ষ নেতার মৃত্যু
নাসির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন হামাস নেতা ইসমাইল বারহুম। ইজরায়েলি বাহিনী সরাসরি হাসপাতালকে লক্ষ্য করে হামলা চালালে বারহুমসহ আরও অনেক রোগী নিহত হন। এছাড়াও গত শনিবার রাতে চালানো হামলায় শীর্ষ হামাস নেতা ও প্যালেস্টাইন সংসদের সদস্য সালাহ আল-বারদাউইল এবং তাঁর স্ত্রী নিহত হন।
সংঘর্ষবিরতি চুক্তির অবসান ও নতুন হামলার সূত্রপাত
ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি মুক্তির জন্য দুই মাসের সংঘর্ষবিরতি চুক্তি হয়েছিল। তবে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হতেই গাজার মাটিতে নতুন করে হামলার ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার গাজায় ভয়াবহ বিমান হামলায় অন্তত ৫০০ জন প্রাণ হারান, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন শিশু ও মহিলা।
ইজরায়েলের কঠোর অবস্থান
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, গাজার মাটি থেকে হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা তাঁদের মূল লক্ষ্য। তাঁর বক্তব্য, যতক্ষণ পর্যন্ত ইজরায়েলি পণবন্দিরা গাজায় আটকে থাকবেন, ততক্ষণ ইজরায়েল কোনও দয়া দেখাবে না। ইজরায়েলের দাবি, হামাসের হাতে এখনও ৬০ জন বন্দি রয়েছেন।
গাজার মানবিক সংকট
প্রতিনিয়ত বিমান হামলা ও সংঘর্ষে গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিশুরা বোমার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে দিন কাটাচ্ছে, হাসপাতালে আহতদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
হামলার নিন্দা বিভিন্ন দেশের
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই হামলার নিন্দা জানানো হলেও ইজরায়েলের অবস্থান দৃঢ়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফে শান্তি আলোচনার আহ্বান করা হলেও সংঘর্ষ বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গাজার আকাশে বোমার গর্জন আর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হাসপাতালগুলো যেন এক মৃত্যুকূপের ছবি তুলে ধরছে।
মানবতা কোথায় দাঁড়িয়ে
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গাজার মানুষের জীবনযুদ্ধ ও ইজরায়েলের নিরাপত্তার অজুহাতে চালানো হামলার মধ্যে মানবতা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে—এই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে।