নাগপুর হিংসার ‘মূলচক্রী’ ফাহিম খানের বাড়িতে বুলডোজার চালালো প্রশাসন
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: নাগপুরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক ঘটনার পর উত্তেজনা এখনও প্রশমিত হয়নি। ঔরঙ্গজেব ইস্যুতে শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও সহিংসতার পর নাগপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এনএমসি) অভিযুক্ত মাস্টারমাইন্ড ফাহিম খানের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়।
সহিংসতার পটভূমি
গত সপ্তাহে নাগপুরে ঔরঙ্গজেব সম্পর্কিত এক বিতর্ককে কেন্দ্র করে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশে কোরানের আয়াত লেখা কাপড় পোড়ানোর গুজব ছড়ায়। এই গুজবের ফলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়, এবং এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ স্থলে জড়ো হন।
এক ডজন পুলিশ সদস্য আহত
এই সহিংসতার ঘটনায় এক ডজন পুলিশ সদস্য ও সমসংখ্যক সাধারণ মানুষ আহত হন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনে আগুন লাগানো হয় এবং দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর চলে।
ফাহিম খানের ভূমিকা ও গ্রেফতার
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে যে নাগপুর হিংসার মূলচক্রী ছিলেন ফাহিম খান। তিনি ‘মাইনরিটি ডেমোক্রেটিক পার্টি’র নগরপ্রধান ছিলেন এবং পেশায় বোরকা বিক্রেতা। সহিংসতার সময় তিনি কিছু উস্কানিমূলক ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন, যা পরিস্থিতি আরও উতপ্ত করে তোলে। ফাহিম খানের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে পুলিশ।
আপত্তিকর মন্তব্য
নাগপুর পুলিশ ফাহিম খান-সহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করে। ফাহিম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ‘হিন্দু পুলিশ’ বলে আপত্তিকর মন্তব্য করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উস্কে দিয়েছিলেন।
বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত
ফাহিম খানের বাড়িটি নাগপুরের যশোধরা নগরের সঞ্জয় বাগ কলোনিতে অবস্থিত। প্রশাসনের দাবি, বাড়িটি অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল এবং অনুমোদিত মানচিত্র ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছিল। কয়েকদিন আগেই নাগপুর পুরসভা খানের পরিবারকে নোটিশ পাঠিয়েছিল, যাতে বাড়ি তৈরির অনুমোদন সংক্রান্ত নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়।
বাড়ির অবৈধ অংশটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে
নির্ধারিত সময়ে কোনো সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় রবিবার সকালে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মীর উপস্থিতিতে এনএমসি বুলডোজার নিয়ে বাড়িতে পৌঁছায়। বাড়ির যে অংশটি অবৈধ ছিল, তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে অন্যান্য অংশে কোনো পদক্ষেপ করা হয়নি।
আরএসএস দফতরের কাছে সহিংসতা
নাগপুরের মহল এলাকায় সংঘটিত এই সহিংসতা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর সদর দফতরের কাছাকাছি ঘটে। আরএসএস কার্যালয় থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর নাগপুরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এমন কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন ছিল, আবার কেউ কেউ প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
উত্তেজনা অব্যাহত
ফাহিম খান কারাগারে থাকলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। সংঘর্ষ কবলিত এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের ওপর নজরদারি চলছে।