Saturday, April 27, 2024
FEATUREDসম্পাদকীয়

ভারতবর্ষের প্রথম ও বিশ্বের দ্বিতীয় টেষ্টটিউব বেবি দূর্গা

কৃতিত্ব ও সন্মানকে কেবলই উপহাস ,অপমান ও লাঞ্ছনা দিয়েই পূর্ণতা দিতে হলো অন্যান্য সাধারন প্রতিভাধর এই ভারতীয় কৃতি চিকিৎসা বিজ্ঞানি ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে।

১৯৭৮ সালের ৩রা অক্টোবর ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষে আবিষ্কার করেন প্রথম টেষ্টটিউব বেবি। নাম তার দূর্গা। প্রকৃত নাম ‘ কানুপ্রিয়া আগরওয়াল ‘।

কানুপ্রিয়া আগরওয়াল

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে , ১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই Dr. Robert Edwards এবং Dr. Patrick Steptoe সম্মিলিতভাবে ইংল্যান্ডের Oldham Hospital-এ বিশ্বের প্রথম টেষ্টটিউব বেবি ‘ Louise Toy Brown ‘ এর জন্ম দেন । অর্থাৎ ভারতীয় বিজ্ঞানী ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আবিষ্কারের মাত্র ৬৭ দিন পূর্বে। এই কারনেই কী তাকে সহ্য করতে হল অসামান্য লানঞ্ছনা ?

Dr. Robert Edwards ২০১০ সালে নোবেল পুরস্কার পান এবং Dr. Patrick Steptoe মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রথা না থাকায় যথা যোগ্য সন্মান পেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় বিজ্ঞানী ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সতন্ত্রভাবে ও নিজ প্রচেষ্টায় আবিষ্কার করেছিলেন টেষ্টটিউব বেবি তা সত্তেও তিনি তাঁর কাজের স্বীস্কৃতির পরিবর্তে পেয়েছেন উপহাস ,অপমান ও লাঞ্ছনা। তার ল্যাবরেটরিতে কোনো বিদেশী অত্যাধুনিক পরিকাঠামো ছিল না। নিজ বাসগৃহের এক অতিসাধারণ ল্যাবরেটরিতে ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার কী স্বীকৃতি পাওয়ার কোনো দাবিই রাখে না? আর এটাই চরম বাস্তবতা যে তার আবিষ্কার কোনো স্বীষ্কৃতি পায়নি, পায়নি নূন্যতম মর্যাদাটুকুও।

ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও টেষ্টটিউব বেবি দূর্গা

স্বীকৃতির পরিবর্তে তাঁকে প্রথমে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাঁকুডায় বদলি করা হয় । তারপর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন । তখন তাঁকে বাঁকুড়া থেকে কলকাতায় বদলি করা হয় । সেখানে রোজ তাঁকে চারতলায় সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হতো। আরো উল্লেখযোগ্য, জাপানে একটি সেমিনারে তাঁর কাজের বিষয়ে বক্তৃতা দেওয়ার আহ্বান পেয়ে ইচ্ছা থাকা সত্তেও যেতে পারেননি তিনি। এর কারন তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সেখানে যোগদানের অনুমতি দেননি এমনকি পাসপোর্টও প্রদান করেন নি। আর সেই সাথে সাথে বদলি তো আছেই। তাকে কলকাতায়ও রাখা হয়নি। কিছু নীচ, হীন, ইর্ষাপরায়ন ডাক্তার তাঁর গবেষণার পথ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ১৯৮১ সালের জুন মাসে তাকে Calcutta Medical College -এর Eye Department -এ বদলি করে দেন। বাস্তবে এতো অপমান তিনি সহ্য করেছেন কিন্তু তাঁর গবেষণার পথ বন্ধ হলে তিঁনি আর মেনে নিতে পারেননি। অবশেষে চূড়ান্ত হতাশায় এবং সীমাহীন অপমানে জুন মাসের ১৯ তারিখে নিজ বাসগৃহে নিজেকে এই নরক যন্ত্রনা থেকে আত্নহত্যার মাধ্যমে নিজেকে মুক্তি দেওয়ার পথ বেছে নেন তিনি।

টেষ্টটিউব বেবি দূর্গা

কিন্তু মৃত্যু মানুষের প্রতিভাকে ধামাচাপা দিতে পারে না। প্রতিভা অপ্রতিরোধ্য। এরই ফলশ্রুতিতে ২০০৭ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত Dictionary of Madical Biography -এর (৫ম খন্ড) , যেখানে বিশ্বের একশোটি দেশের এগারশো চিকিৎসা বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কারকে তুলে ধরা হয়েছে , সখানে কলকাতা শহরের মাত্র তিনজন চিকিৎসা বিজ্ঞানীর আবিষ্কারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন Sir Ronald Ross, উপেন্দ্রনাথ ব্রক্ষচারী এবং ড.সুভাষ মুখোপাধ্যায় । এছাড়াও ২০০৭ সালে সাও পাওলো-তে অনুষ্ঠিত ‘IVF-30 years’ -এর অধিবেশনে ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায় -এর আবিষ্কারকে স্বীকৃতি জানায় ও কুর্নিশ করে ব্রাজিলিয়ান মেডিক্যাল সোসাইটি।