পাকিস্তানকে ভাতে মারার পরিকল্পনা ভারতের, সমস্ত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে সম্প্রতি হওয়া জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দুই দেশের মধ্যে কার্যত যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে একাধিক কৌশল অবলম্বন করছে ভারত। তারই অংশ হিসেবে শনিবার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্তরকম পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মোদী সরকার।
বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, “পাকিস্তানে উৎপন্ন বা রপ্তানি করা সমস্ত পণ্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আমদানি বা পরিবহন তাৎক্ষণিকভাবে নিষিদ্ধ করা হল। এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তা এবং জননীতির স্বার্থে নেওয়া হয়েছে।” এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করতে হলে কেন্দ্রের পূর্ব অনুমোদন প্রয়োজন হবে বলেও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্ত বন্দরপথ।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসলামাবাদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বেড়েছে। উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন নিরীহ মানুষ। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে, হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দু’জন পাকিস্তানের নাগরিক। হামলার মূল চক্রী হিসেবে হাফিজ সঈদের নাম উঠে আসায় পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে।
এর আগে পাকিস্তান একতরফা সিদ্ধান্তে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। তবে তাতেই সমস্যা বাড়ে ইসলামাবাদেরই। বিশেষত, ভারতীয় বাজার থেকে কাঁচামাল না পাওয়ায় পাকিস্তানের ওষুধ শিল্প কার্যত ভেঙে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি কাঁচামাল সংকটে ভুগছে, যার ফলে চিকিৎসার অভাবে সাধারণ মানুষকে জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও কূটনৈতিক ময়দানেও সক্রিয় হয়েছে নয়াদিল্লি। আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানকে আরও চাপে ফেলতে আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর কাছে আবেদন জানাচ্ছে ভারত, যাতে পাকিস্তানকে আর কোনও ঋণ না দেওয়া হয়। নয়াদিল্লির দাবি, যে দেশ সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়, তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া উচিত নয়।
এইভাবে একাধারে বাণিজ্য, কূটনীতি এবং অর্থনৈতিক কৌশল—তিন দিক থেকেই পাকিস্তানকে চেপে ধরার নীতি নিচ্ছে ভারত। সামরিক উত্তেজনার মধ্যে এই রকম ‘ভাতে মারার’ কৌশল, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক নতুন পালক যোগ করল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।