বাংলাদেশে হিন্দু নেতাকে বাড়ি থেকে অপহরণ, পিটিয়ে খুনের অভিযোগ, এটাই কী নতুন বাংলাদেশ?
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নিপীড়নের ঘটনা যেন কোনোভাবেই থামছে না। এবার দিনাজপুর জেলার বিরাল থানার অন্তর্গত বাসুদেবপুর গ্রামে নৃশংসভাবে খুন হলেন হিন্দু নেতা ভবেশচন্দ্র রায়। তিনি বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের বিরাল শাখার সহ-সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় হিন্দু সমাজের এক প্রভাবশালী নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি।
অপহরণ করে পিটিয়ে হত্যা
প্রতক্ষ্যদর্শীদের ও পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ একটি অচেনা নম্বর থেকে ভবেশচন্দ্র রায়ের ফোনে কল আসে। ফোনের ওপার থেকে জানতে চাওয়া হয় তিনি বাড়িতে আছেন কিনা। এরপর মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে দুটি মোটরবাইকে করে চারজন দুষ্কৃতী এসে তাঁকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। স্থানীয় নরাবাড়ি গ্রামে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। কিছু সময় পর অচৈতন্য অবস্থায় ভবেশবাবুকে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। পরিবারের লোকেরা তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আতঙ্কের ছায়া, প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে
এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চরম আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিরাল থানার ওসি আবদুস সবুর জানিয়েছেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। মামলা রুজু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।” কিন্তু সংখ্যালঘু সমাজের প্রশ্ন—এই ধরণের হামলা বারবার ঘটলেও প্রশাসনের পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হচ্ছে?
শুধু ভবেশচন্দ্র রায়ের ঘটনাই নয়, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ বাস্তব তুলে ধরছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে খুন হয়েছেন ৩২ জন হিন্দু। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩ জন সংখ্যালঘু নারী। ভাঙা হয়েছে ১৩৩টি মন্দির। এই পরিসংখ্যানের তুলনায় প্রশাসনের নীরবতা যেন আরও অমানবিক হয়ে উঠেছে।
এটাই কী ‘নতুন বাংলাদেশ’
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই ইউনুস সরকার ভারতের সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উচ্চবাচ্য করেছিল। অথচ নিজ দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা যে চরম প্রশ্নের মুখে, তা নিয়ে নীরব রয়েছে প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত জেলবন্দি আছেন ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভু। একের পর এক মন্দির ভাঙচুর এবং ধর্মীয় নেতাদের উপর আক্রমণ প্রমাণ করছে, ‘বদলে’র বাংলাদেশে হিন্দুরা আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়েছেন।
এই ঘটনা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে ফের বড় প্রশ্ন তুলে দিলো। আন্তর্জাতিক মহল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি কি এবার নড়েচড়ে বসবে?