Saturday, May 17, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

ভয়ংকর ঘটনা পাকিস্তানে, ধর্মান্তরিত না হওয়ায় হিন্দু ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বারবার বলা সত্ত্বেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। এই ‘অপরাধে’ এক হিন্দু যুবককে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের পেশাওয়ারে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, পেশাওয়ারের একটি বাজারে ওই হিন্দু যুবককে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তিনি দোকানদার ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি তাঁর দোকানে বসেছিলেন। হঠাৎ দুই বন্দুকধারী এসে তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধর্মান্তরিত করার জন্য ওই যুবকের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। কিন্তু তিনি তা মানতে রাজি হননি। এর জেরেই এই হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে। ঘটনার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।এই ঘটনায় স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, পাকিস্তানে হিন্দু, শিখ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। এর আগেও পেশাওয়ারে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

পাকিস্তানের দ্বিচারিতা

এই ঘটনার কয়েকদিন আগেই পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে সমালোচনা করে ‘জ্ঞান’ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাবি করেছিলেন যে, ভারতের সংখ্যালঘুদের অধিকার সমর্থন করার কোনও যোগ্যতা নেই। কিন্তু পাকিস্তানের নিজের ঘরে যে সংখ্যালঘুদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট। হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের জীবন, সম্পত্তি, ধর্মীয় স্থান এবং স্বাধীনতা ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়ছে।

কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান

পাকিস্তানে কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি দেশের নিজস্ব জনগণও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জঙ্গিরা এখন মসজিদেও হামলা চালাচ্ছে। তবে পাকিস্তান সরকার নিজেদের সমস্যার সমাধান না করে ভারতের দিকে আঙুল তোলায় ব্যস্ত।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর লোকসভায় পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের দুর্দশা নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, পাকিস্তানে হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন, জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ, মন্দিরে হামলা এবং অপহরণের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। তিনি জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে হিন্দুদের উপর ১০টি, শিখদের উপর ২টি এবং খ্রিস্টানদের উপর ১টি অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। এমনকী হোলি উদযাপনকারী ছাত্রদের অপহরণ ও ধর্মান্তকরণের অভিযোগও উঠেছে।

ইন্দিরা গান্ধীও পারেননি

জয়শংকর আরও বলেন, “পাকিস্তানের ধর্মান্ধ মানসিকতা পরিবর্তন করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকী ইন্দিরা গান্ধীও এই কাজ করতে পারেননি।” তিনি জানান, ভারত সরকার পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং রাষ্ট্রসংঘের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই বিষয়টি তুলে ধরেছে।

পাকিস্তানে হু হু করে কমছে হিন্দু এবং শিখ জনসংখ্যা 

বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখদের জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে। তারা হয় জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছেন, নয়তো দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সরকারের দাবি—তারা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় কাজ করছে—হাস্যকর মনে হয়।

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা

পেশাওয়ারের এই হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে দেশটির কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান শুধু সংখ্যালঘুদের জন্যই নয়, পাকিস্তানের নিজস্ব স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কূটনৈতিক মহলের মতে, এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের উচিত নিজের সমস্যার সমাধানে মনোযোগ দেওয়া, অন্য দেশের দিকে আঙুল তোলার পরিবর্তে। তথ্যসূত্র: Live Hindustan