চিনের উপর ২৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: আমেরিকা ও চিনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ আরও একধাপ তীব্র হয়ে উঠল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, চিনা পণ্যের আমদানির উপর সর্বোচ্চ ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত একটি ফ্যাক্ট শিটে জানানো হয়েছে, বেজিংয়ের রপ্তানি বিধিনিষেধ এবং প্রতিশোধমূলক শুল্ক নীতির জবাব হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্কযুদ্ধ এখন আর শুধু অর্থনৈতিক স্তরে নেই, এটি রীতিমতো কূটনৈতিক সংঘাতে পরিণত হয়েছে। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চিন সম্প্রতি মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে এবং উচ্চপ্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ—যেমন গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম ও অ্যান্টিমনি—র রপ্তানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এর প্রতিক্রিয়াতেই আমেরিকা এবার চিনা পণ্যের উপর শুল্ক আরও বাড়াল।
ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী, চিনা বিমান সংস্থাগুলির বোয়িং জেট কেনার উপর নিষেধাজ্ঞা-সহ একাধিক আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছে বেজিং। তারই পাল্টা হিসাবে এই সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “এখন যা করার চিনকেই করতে হবে। আমেরিকা কোনও অবস্থাতেই মাথা নত করবে না।”
এক সাংবাদিক বৈঠকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানান, “চিন সম্পর্কিত মার্কিন অবস্থান খুবই পরিষ্কার। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বল এখন চিনের কোর্টে। তারা যদি সমঝোতা করতে চায়, সেটা ওদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “চিন যত বড় দেশই হোক, বিশ্বে অন্য যে কোনও দেশের মতোই। তাই তাদের জন্য আলাদা ছাড়ের প্রশ্নই নেই।”
শুল্ক আরোপের এই পালা-পাল্টা পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ, চিন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিরল ধাতু ও উপাদানের জোগান হঠাৎ করে কমিয়ে দিচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে মহাকাশ, সেমিকন্ডাক্টর এবং সামরিক প্রযুক্তির উপর।
এই অবস্থায় চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, “চিন যুদ্ধ চায় না, কিন্তু যুদ্ধ করলে ভয়ও পায় না। যদি আমেরিকা সমাধান চায়, তাহলে হুমকি নয়—চিনের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে কথা বলা উচিত।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমেরিকার এই একের পর এক চাপ সৃষ্টির কৌশল তাদের ব্ল্যাকমেল করার মনোভাবেরই পরিচায়ক।”
আন্তর্জাতিক মহল এখন তাকিয়ে, এই সংঘাত কোন পথে এগোয়—সমঝোতা না কি আরও বড় আর্থ-রাজনৈতিক সংঘাতে পরিণত হয়। তবে স্পষ্ট যে, বর্তমান পরিস্থিতি দু’দেশের অর্থনীতি ছাড়াও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ও বাজারে গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে।