শনিওয়ার ওয়াদা দুর্গে নামাজ পড়লেন ৩ মহিলা, হিন্দু ঐতিহ্যকে অবমাননা, বিতর্ক তুঙ্গে
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: পুণের ঐতিহাসিক শনিওয়ার ওয়াদা দুর্গে ৩ মুসলিম মহিলা নামাজ আদায় করেছেন। এই ঘটনায় বিতর্ক তুঙ্গে। অনেকে মনে করছেন, এটি শুধু ধর্মীয় প্রার্থনা নয়, বরং এক ধরণের ‘প্রতীকী অনুপ্রবেশ’—যেখানে হিন্দুদের ঐতিহ্যবাহী স্থানে অন্য ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় চর্চার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সেই স্থানকে নিজেদের বলে দাবি প্রতিষ্ঠার প্রবণতা তৈরি করছে।
শনিওয়ার ওয়াদার ঐতিহাসিক গুরুত্ব
১৭৩২ সালে পেশোয়া বাজিরাও প্রথম এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। এটি কেবল একটি স্থাপত্য নয়, বরং মারাঠা সাম্রাজ্যের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। বিদেশি শাসনের শতাব্দীব্যাপী দমন-নিপীড়নের পর এই দুর্গ ভারতীয় স্বাভিমানের পুনর্জাগরণের স্মারক। তাই দুর্গের ভেতরে অন্য ধর্মীয় প্রার্থনা অনেকের কাছে হিন্দু ঐতিহ্যের প্রতীকী অবমাননা হিসেবেই দেখছেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি সাংসদ মেধা কুলকর্ণি দুর্গে ‘শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ’ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, এটি ঐতিহ্য রক্ষার সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ—“হিন্দু ঐতিহ্য রক্ষার নৈতিক দায়বদ্ধতা।”
নামাজ ও ‘নীরব অনুপ্রবেশ’-এর বিতর্ক
ভারতের নানা প্রান্তে পাবলিক স্থানে নামাজ পাঠের প্রবণতা গত দুই দশকে বেড়েছে—রাস্তা, পার্ক, রেলস্টেশন বা সরকারি প্রাঙ্গণেও দেখা যায় এমন দৃশ্য। প্রাথমিকভাবে যুক্তি ছিল—মসজিদের অভাব। কিন্তু ধীরে ধীরে এগুলি অনেকের কাছে ‘অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীকী প্রদর্শন’ বলে দেখা হচ্ছে।
বেশ কিছু জায়গায় দেখা গেছে, অস্থায়ী নামাজ পাঠ ধীরে ধীরে নিয়মিত রীতি হয়ে উঠছে, এবং পরবর্তীতে সেই স্থানকে ওয়াকফ বোর্ড নিজেদের বলে দাবি করে।
মধ্যপ্রদেশ থেকে কর্ণাটক—ওয়াকফ বোর্ডের বাড়বাড়ন্ত
মধ্যপ্রদেশের রায়সেন জেলার মাখনি গ্রামে ওয়াকফ বোর্ড ৩ একর জমির মালিকানা দাবি করে, যার মধ্যে স্থানীয় কৃষিজমি, সরকারি জমি এমনকি একটি শিবলিঙ্গও অন্তর্ভুক্ত। কোনো প্রমাণ ছাড়াই বোর্ড দাবি করে, এটি একসময় কবরস্থান ছিল—এক অচেনা কাদির খানের দান!
একইভাবে কর্ণাটকে বোর্ডের মালিকানা দাবি পৌঁছেছে ৭০টিরও বেশি ঐতিহাসিক স্থানে, যার মধ্যে রয়েছে—ASI-নিরাপত্তায় থাকা টিপু আর্মারি, শ্রী চামারাজেন্দ্র জাদুঘর, চিক্কাদেবী মন্দির, এমনকি সরকারি স্কুলও। কর্ণাটক সরকারের হস্তক্ষেপের পরই ওই দাবিগুলি স্থগিত হয়।
ওয়াকফ আইন অনুযায়ী, একবার কোনো জমি ‘ওয়াকফ সম্পত্তি’ ঘোষণা করা হলে তা স্থায়ী, অপরিবর্তনীয় ও নাগরিক আদালতের আওতার বাইরে। ফলে সাধারণ নাগরিক প্রায় অসহায় হয়ে পড়েন।
‘নির্বাচিত ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ঐতিহ্যের ক্ষয়
সমালোচকরা বলছেন, ভারতে ‘নির্বাচিত ধর্মনিরপেক্ষতা’ এক বিপজ্জনক প্রবণতা নিয়েছে। যদি হিন্দুরা জামা মসজিদ বা হাজি আলি দরগায় হনুমান চালিসা পাঠ করতেন, তবে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হতো। কিন্তু হিন্দু ঐতিহ্যবাহী স্থানে অন্য ধর্মীয় আচরণ হলে সেটিকে সহনশীলতা বলে ব্যাখ্যা করা হয়।
মেধা কুলকর্ণির ভাষায়, ‘আমাদের কর্তব্য হিন্দু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করা।’ এই বার্তা পুণে থেকে শুরু করে মাখনি ও শ্রীরঙ্গপট্টনম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
আইনি সংস্কার ও নাগরিক সতর্কতা
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংসদে পেশ হয় ওয়াকফ সংশোধনী বিল, যাতে জমি ঘোষণা ও মালিকানা যাচাইয়ে স্বচ্ছতা ও তৃতীয় পক্ষের নিরীক্ষা চালুর প্রস্তাব রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন যথেষ্ট নয়; ‘জনসাধারণের সতর্কতা’ নাগরিকদের নিজস্ব ঐতিহ্য রক্ষায় সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।
তথ্যসূত্র: OP India


