Tuesday, May 13, 2025
Latestদেশ

ঐতিহাসিক ওয়াকফ আইনের সমর্থনে দেশব্যাপী প্রচারে নামছে মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ওয়াক্‌ফ (সংশোধনী) আইন ২০২৫ সম্পর্কে দেশজুড়ে প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ (MRM)। আরএসএস-ঘনিষ্ঠ মুসলিম সংগঠনটি আগামী দিনে ১০০টিরও বেশি প্রেস কনফারেন্স ও ৫০০-র বেশি সেমিনার করবে বলে ঘোষণা করেছে। উদ্দেশ্য—নতুন আইনের প্রসঙ্গে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তি দূর করা এবং মুসলিম সমাজকে এর প্রকৃত উদ্দেশ্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জানানো।

মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের পথপ্রদর্শক ইন্দ্রেশ কুমার দিল্লির এক অনুষ্ঠানে বলেন, “এই আইন মুসলিম সমাজের আত্মসম্মান, ন্যায়বিচার ও সমঅধিকারের ভিত্তি আরও শক্ত করবে।” তিনি দাবি করেন, নতুন সংশোধিত ওয়াক্‌ফ আইন কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং সকল মুসলিমের স্বার্থেই প্রণীত।

ইন্দ্রেশ কুমার আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থা, স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতি চলে আসছিল। নতুন সংশোধনী তার অবসান ঘটিয়ে স্বচ্ছ ও ন্যায্য ব্যবহার নিশ্চিত করবে, যাতে সমাজের সব স্তরের মানুষ উপকৃত হন।

জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল এই আইনের প্রশংসা করে বলেন, “এই আইন মুসলিম সমাজের জন্য এক বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ। সমাজে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ভুল ধারণা, দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর করার এক সুবর্ণ সুযোগ এটি।”

আরএসএস নেতা রামলাল এই আইনকে “বিশ্বাস ও সম্প্রীতির নতুন মাইলফলক” বলে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “এই পরিবর্তন কেবল আইনগত নয়, বরং সামাজিক ও নৈতিক সংস্কারের পথে এক বড় পদক্ষেপ।” তিনি আরও বলেন, এই আইন ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ স্লোগান বাস্তবায়নের দিশা দেখাবে।

নতুন আইনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে:

  • ওয়াকফ কাউন্সিলে সর্বোচ্চ ৪ জন অ-মুসলিম সদস্য থাকতে পারবেন, যাঁদের মধ্যে ২ জন নারী হতে হবে।
  • কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ নাকি সরকারের, তা নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতা এখন জেলাশাসকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাতে।

আইনটি ৩ এপ্রিল লোকসভায় ১২ ঘণ্টার বিতর্কের পরে ২৮৮ ভোটে পাশ হয়, যেখানে ২৩২ জন বিরোধিতা করেন। ৪ এপ্রিল রাজ্যসভায় ১২৮-৯৫ ব্যবধানে বিলটি অনুমোদন পায়। প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতির পরে এটি আইনে পরিণত হয়।

যদিও কেন্দ্র সরকার আইনটিকে “স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতার” লক্ষ্যে তৈরি বলছে, বিরোধীরা এটিকে মুসলিম-বিরোধী ও অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, এতে মুসলিম সমাজের নিজস্ব সম্পত্তির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যাবে।

তবে মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের মতে, এই আইন মুসলিম সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত ও আত্মনির্ভর করার পথ প্রশস্ত করবে। তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়ানোর ডাক দিয়েছে, যাতে গুজব নয়, তথ্যের ভিত্তিতে মানুষ মত গঠন করতে পারে।