Saturday, May 24, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বাংলাদেশে গ্রেফতার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মহাসচিব কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ নতুন নয়। এবার সেই বিতর্কে নতুন করে ঘি ঢেলেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব ও বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতি কপিল কৃষ্ণ মণ্ডলের গ্রেফতার। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বাগেরহাটের চিতলমারী থানা পুলিশ তাঁকে ১৫ মার্চ ভোরে গ্রেফতার করে।

রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ও বিতর্ক

পুলিশের দাবি, কপিল কৃষ্ণ মণ্ডলের মোবাইল ফোনে বিদেশি নাগরিকদের সাথে সন্দেহভাজন বৈঠকের ছবি এবং কথোপকথনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং আদালতে পেশ করা হয়। যদিও তাঁর সমর্থকরা দাবি করেছেন যে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর গ্রেফতার

এর আগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভু। গত বছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর সমর্থনে চট্টগ্রাম আদালতের বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতে গেলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে, যার ফলে এক আইনজীবী নিহত হন এবং ২১ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করা হয়।

সংখ্যালঘু নির্যাতন, মন্দির ভাঙচুর, ধর্মান্তরকরণ

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, মন্দির ভাঙচুর এবং ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর থেকেই এই অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে।

হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ

বিশেষ করে চট্টগ্রামে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং নির্যাতনের ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এমনকি ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে কট্টরপন্থীদের আন্দোলন পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ সরকারকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ঘটনাগুলোর প্রতি নজর রাখছে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।

হিন্দুদের ওপর নির্যাতন এবং ধর্মীয় বৈষম্য বাড়ছে

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন এবং ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল ও চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর গ্রেফতার এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এবং সেই সাথে সংখ্যালঘু সুরক্ষার প্রশ্নও সামনে আসছে। সরকার যদি দ্রুত এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।