২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ভারতের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধির পথে আরও একটি সুখবর। আর্থিক সংস্থা মর্গান স্ট্যানলি-র সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, মাত্র তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৮ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। বর্তমানে পঞ্চম স্থানে থাকা ভারতের অর্থনীতি তখন টপকে যাবে জার্মানিকে এবং ভারতের সামনে থাকবে মাত্র দুটি দেশ—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন।
ভারতের অর্থনৈতিক উত্থান: একটি নজিরবিহীন সাফল্য
বর্তমানে ভারতের অর্থনীতির আকার প্রায় ৩.৫ লক্ষ কোটি ডলার। মর্গান স্ট্যানলির বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২৪ সালে এই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়াবে ৪.৭ লক্ষ কোটি ডলারে। তারপর থেকে আর্থিক বৃদ্ধির গতি বজায় থাকলে ২০২৮ সালে এই অর্থনীতির আকার পৌঁছবে ৫.৭ লক্ষ কোটি ডলারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের অর্থনৈতিক উত্থান শুধু পরিসংখ্যানগত নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ফল। ১৯৯০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান ছিল ১২তম, কিন্তু সেই অবস্থান থেকে আজ পঞ্চম স্থানে উঠে আসা নিঃসন্দেহে এক বিশাল সাফল্য।
অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মূল কারণ
মর্গান স্ট্যানলির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ কাজ করছে। সেগুলি হলো—
- তরুণ জনসংখ্যা: ভারতের বিশাল কর্মক্ষম যুব সমাজ অর্থনীতিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে।
- প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন: তথ্যপ্রযুক্তি, ডিজিটালাইজেশন এবং স্টার্টআপ সংস্কৃতি অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে।
- বৃহৎ বাজার: অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও ক্রমবর্ধমান ভোক্তাবাজার ভারতকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত করেছে।
- উন্নত অবকাঠামো: অবকাঠামোগত প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ দেশের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করছে।
- বৈদেশিক বিনিয়োগ: ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
মাথাপিছু জিডিপি: এক বিশাল অগ্রগতি
মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মর্গান স্ট্যানলি। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২,৫১৪ ডলার হলেও ২০৩৫ সালে এটি বেড়ে ৫,৬৮৩ ডলার হবে। আর্থিক পরিস্থিতি বুল থাকলে এই অঙ্ক ৬,৭০৬ ডলার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনার তিনটি স্তর
মর্গান স্ট্যানলি তিনটি আর্থিক স্তরের কথা উল্লেখ করেছে—
- বিয়ার অর্থনীতি: ২০৩৫ সালে অর্থনীতির আকার ৬.৬ লক্ষ কোটি ডলার হবে।
- বেস অর্থনীতি: এই ক্ষেত্রে অর্থনীতির আকার পৌঁছবে ৮.৮ লক্ষ কোটি ডলারে।
- বুল অর্থনীতি: সর্বোচ্চ সম্ভাবনার ক্ষেত্রে এটি পৌঁছবে ১০.৩ লক্ষ কোটি ডলারে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান
বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবদানও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ২০২৯ সালে বিশ্বের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টস বা জিডিপি) ক্ষেত্রে ভারতের অবদান ৩.৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। এটি প্রমাণ করে যে, ভারতের অর্থনৈতিক ভিত্তি কেবল মজবুত নয়, বরং আগামী দশকে এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।