Saturday, May 24, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

‘যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলি সেনারা গাজাতেই থাকবে’

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: গাজায় চলমান সংঘাত এক নতুন মোড় নিচ্ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ হলেও গাজার তথাকথিত ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ বা বাফার জোনে ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে। এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ, এটি গাজায় একটি স্থায়ী দখলদারির সংকেত বলেই অনেকেই মনে করছেন।

ইসরায়েলের নতুন কৌশল: দখল ও দমন

১৮ই মার্চ থেকে আবার গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর, ইসরায়েল অনেক অংশ নিজেদের দখলে নিয়েছে বলে কাৎজ দাবি করেছেন। তিনি আরও জানান, সেনারা এবার আর ‘পূর্বের মতো’ দখলকৃত এলাকা ছেড়ে যাবে না। বরং ‘লেবানন ও সিরিয়ার মতো’ নিরাপত্তা অঞ্চল ধরে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গাজায় ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের মধ্যে ফের উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

ইসরায়েল বলছে, গাজায় তারা ‘অপারেশনাল সিকিউরিটি পেরিমিটার’ তৈরি করেছে, যা গাজার প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে। এই করিডোর রাফাহ ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করেছে, যাতে হামাসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া যায়।

মানবিক অবরোধ: সহিংসতার বাইরেও এক যুদ্ধ

ইসরায়েল শুধু সামরিক আক্রমণেই থেমে থাকেনি; বরং তারা গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢুকতে দিচ্ছে না। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কাৎজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “কোনো মানবিক সাহায্য গাজায় প্রবেশ করবে না।” তার মতে, এটি হামাসের ওপর চাপ তৈরির জন্য একটি কৌশল।

তবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এই পদক্ষেপকে মানবিক আইনের পরিপন্থী বলে চিহ্নিত করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৬৯ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলি উচ্ছেদ অভিযান চলছে এবং পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ পুনরায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই মানুষদের এখন কোনও নিরাপদ আশ্রয় নেই।

চরম মানবিক সংকট

আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্ট্রিয়ার্স’ বা এমএসএফ জানিয়েছে, গাজায় এখনকার পরিস্থিতি এক গণকবরে রূপ নিয়েছে। তাদের কর্মী অ্যামান্ডে ব্যাজেরোলে বলেছেন, “আমরা গাজার মানুষের ধ্বংস ও জোরপূর্বক স্থানান্তর বাস্তবে দেখছি।” সংস্থাটি আরও জানায়, খাদ্য, ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামের মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে।

পাশাপাশি, অপুষ্টির হার ভয়াবহ হারে বেড়েছে। মার্চ মাসে সম্পূরক খাদ্য পাওয়া শিশুদের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। জাতিসংঘ বলছে, আর কোনও তাঁবু অবশিষ্ট নেই এবং মানবিক সাহায্য বিতরণ কার্যত থমকে গেছে।

সাধারণ মানুষের মৃত্যু মিছিল

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৮ই মার্চ থেকে আবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এক হাজার ৬৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। শুধু গত বুধবারেই নিহত হয়েছেন ২৪ জন, যাঁদের মধ্যে ১০ জন হাসুনা পরিবারের সদস্য। এই পরিবারে নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু, এবং তাদেরই একজন ছিলেন তরুণ ফিলিস্তিনি লেখক ও ফটোগ্রাফার ফাতেমা হাসুনা।

বন্দিদের মুক্তি বনাম যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া: দ্বিধা ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও

ইসরায়েল সরকার বলছে, জিম্মিদের মুক্তি তাদের প্রথম অগ্রাধিকার। তবে ‘জিম্মিদের পরিবার ফোরাম’ এই দাবিকে ‘ভ্রম’ বলে উল্লেখ করেছে। তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “সবার আগে জিম্মিদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি ছিল, কিন্তু ইসরায়েল বাস্তবে আগেই দখলকে প্রাধান্য দিচ্ছে।”

এমনকি ইসরায়েলের সামরিক রিজার্ভ সদস্য এবং সাবেক সেনারাও একাধিক খোলা চিঠিতে যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে দাবি তুলেছেন। তবে কাৎজ জানিয়েছেন, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কোনও পরিকল্পনা নেই যদি না হামাস সব বন্দি ইসরায়েলিকে ছেড়ে দেয়।

হামাসের অবস্থান

হামাস স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনও যুদ্ধবিরতি তখনই বাস্তব হবে যদি সেনা প্রত্যাহার ও অবরোধ প্রত্যাহার করা হয় এবং গাজার পুনর্গঠন শুরু হয়। অন্যথায়, তারা সেই বিরতিকে “রাজনৈতিক ফাঁদ” হিসেবে দেখবে।

৭ই অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাসের আকস্মিক হামলা এবং ১২০০ জনের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা এখন ৫১ হাজারেরও বেশি প্রাণহানিতে পৌঁছেছে।