কৃষক আন্দোলন সাজানো ঘটনা, দেখে নিন পয়েন্টগুলি
নয়াদিল্লি: মোদী সরকারের আনা কৃষি বিলের প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। প্রায় দুই মাসের উপরে চলছে বিক্ষোভ কর্মসূচি। কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে মুখ খুলেছে রিহানা, গ্রেটা, মিয়া খলিফার মতো ব্যক্তিত্ব। পাল্টা কড়া জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেলিব্রেটিরাও। সচিন তেন্ডুলকার, রবি শাস্ত্রী, বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ানরা মনে করছেন, কৃষকদের আন্দোলনের নামে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। টুইটারে ট্রেন্ড করেছে- ইন্ডিয়া টুগেদার এবং ইন্ডিয়া অ্যাগেনস্ট প্রোপাগান্ডা হ্যাশট্যাগ।
প্রধানমন্ত্রী অসংখ্যবার জানিয়েছেন, তিনটি আইন কৃষকদের প্রভূত উপকার করবে। বিরোধীরা মিথ্যে বলছে। দেশের কৃষকদের একটা বড় অংশও কৃষি বিলের সমর্থনে কথা বলেছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নয়। সরকার দেড় বছরের জন্য কৃষি আইন স্থগিত রাখতে রাজি হয়েছে। তবুও কৃষকদের দাবি, মোদী সরকারের আনা নতুন তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে৷ কি বলা হয়েছে তিনটি নতুন কৃষি আইনে? বিলগুলি হল ‘অত্যাবশ্যক পণ্য আইন’ সংশোধন, ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ এবং ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ বিল। নতুন এই তিনটি আইন কার্যকর থাকলেও কৃষকদের কাছে তো পুরোন নিয়মেই ফসল বিক্রির পথ খোলা থাকছে৷ বরং কৃষকদের কাছে ফসল বিক্রির নতুন একটি পথ খুলে যাচ্ছে৷ তাহলে এই আন্দোলনের যথার্থতা কি?
দেশের প্রতিটি জেলায় ফড়েদের দাপট রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে তাদের দাপট অব্যাহত রাখতেই কি এই আন্দোলন? কৃষকরা তাঁদের নিজেদের আয়ের একটা অংশ ফড়েদের দিয়ে দিতেও রাজি? একটু ঘেটে দেখলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের ইস্তেহারে এই একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস৷ আম আদমি পার্টির ইস্তেহারেও একই দাবি করা হয়েছিল৷ ভারতীয় কিষান ইউনিয়নও বরাবর দাবি করে এসেছে, নিজেদের ফসল কৃষকদের যেখানে খুশি বিক্রির স্বাধীনতা থাকা উচিত৷ তাহলে এই বিক্ষোভ কেন? বর্তমান আইনে তো কৃষকরা তাঁদের ফসল অনেক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এইতো গতকালকেরই খবর- ‘এক টাকা ফুলকপির কেজি। ক্ষোভে হতাশায় ১০০০ কেজি ফুলকপি রাস্তার ধারে রেখেই বাড়ি ফিরলেন কৃষক’। তাহলে পুরনো আইন কি পেরেছে দেশের কৃষকদের হাল ফেরাতে?
কংগ্রেস অথবা অন্যান্য রাজনৈতিক দল সরকারে থাকার সময় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি কেন? কারণ, সম্ভবত তাদের উপরে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপ ছিল যারা কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে৷ দশকের পর দশক ধরে দেশে মান্ডি এবং ফড়েদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই ব্যবস্থা চলে আসছে৷ তাদের সঙ্গে রাজনীতির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে৷ আর মান্ডি এবং ফড়েদের উস্কানিতে কৃষকরা বিদ্রোহ করলে রাজনীতিক দলগুলির কাঠামোই ভেঙে পড়তো৷ তাই হয়তো কংগ্রেস অথবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সরকার সাহস করে উঠতে পারিনি। মোদী সরকার ৩৭০ ধারা বাতিলের মতো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেবারও দেশের বিরোধী দল-সহ আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে পাকিস্তানপন্থীরা উঠে পড়ে লেগেছিল। তবে সেইসব ধোপে টেকেনি। কেন ৩৭০ ধারা বাতিল কি দেশের পক্ষে খারাপ ছিলো?
চলতি বছরে কৃষিক্ষেত্রে জিডিপি বৃদ্ধির হার ইতিবাচক৷ বর্ষাও ভালো হয়েছে৷ ট্র্যাক্টরের বিক্রিতে নয়া রেকর্ড গড়েছে৷ এই মুহূর্তে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের বিষয় চোখে পড়ছে না৷ তবুও কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে বিক্ষোভের অভিযোগ সামনে নিয়ে আসা হয়েছে৷ এই আন্দোলনের ফলে কারা উপকৃত হচ্ছে সেটা জানা প্রয়োজন৷ এই আন্দোলনে সবথেকে কাস্তে এবং হাতুড়ি চোখে পড়ছে৷ ভারতের জনসংখ্যার অর্ধেক কৃষিকাজের উপরে নির্ভরশীল৷ এই জনসংখ্যার যদি কোনও রাজনৈতিক সমর্থনের প্রয়োজন হয়, তাহলে কি তাঁরা বামপন্থীদের দিকে ঝুঁকতেন? তবে বামপন্থী দলগুলি তো অনেক দিন আগেই দেশবাসীর সমর্থন হারিয়েছে৷
নতুন আইন পাশ হওয়ার পর আট মাস কেটে গিয়েছে৷ এর আগে মূলত একটি রাজ্য থেকেই ১০ হাজার মতো কৃষক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল৷ ফলে এই বিক্ষোভ গোটা দেশের তা বলা যাবে না৷ আর বিদেশিদের মধ্যে যারা কৃষি আইনের বিপক্ষে মুখ খুলেছেন তারা কি এই আইনগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত? নাকি আলোচনায় উঠে আসতেই টুইট করেছেন? তাছাড়া এই বিক্ষোভে চিন-পাকিস্তানের স্বার্থ কি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা যায়? কেননা ৩৭০ ধারা বাতিল থেকে শুরু করে সিএএ ছোট, বড় যাই ঘটুক না কেন, তা আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরে এমন ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা চলছে যাতে মনে হয় দেশ সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে৷
লেখক- সমরেশ সরকার, মতামত সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত


