Wednesday, April 23, 2025
Latestদেশ

ওয়াকফ সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে যন্তর মন্তরে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের বিক্ষোভ

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি)। সোমবার নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে তারা বিশাল বিক্ষোভ কর্মসূচি আয়োজন করে। বিভিন্ন মুসলিম ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি কয়েকজন বিরোধী সাংসদও এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগে ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি সংসদে উত্থাপন করতে পারে সরকার।

বিক্ষোভের নেপথ্যে কী?

ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪-এর বিরোধিতায় এআইএমপিএলবি-র বক্তব্য, এই বিলের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডের অধিকার হ্রাস করা হবে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পত্তি সংরক্ষণে সমস্যা তৈরি হবে। এআইএমপিএলবি-এর সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি দাবি করেছেন, গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তাদের উদ্বেগ শোনা হয়নি। তিনি বলেন, “সরকার যে কোনও মূল্যে এই সংশোধনী আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। আমরা চাই না পরিস্থিতির অবনতি হোক, কিন্তু সরকার যেন সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করছে।”

বিজেপি সাংসদের তীব্র সমালোচনা

ওয়াকফ সংশোধনী বিলের যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) চেয়ারম্যান এবং বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল এআইএমপিএলবি-র প্রতিবাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের বিক্ষোভ সমাজে বিভাজন তৈরি করতে পারে এবং সংসদের আইন প্রণয়নের অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।” পাল আরও দাবি করেন যে এআইএমপিএলবি ইতিমধ্যেই কমিটির কাছে তাদের উদ্বেগ উত্থাপন করেছে এবং সেই বিষয়গুলি বিবেচনায় নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

বিজেপি সাংসদ বলেন, “ওয়াকফ সংশোধনীর পর আরও ভালো আইন তৈরি হতে চলেছে। দরিদ্র, মহিলা, বিধবা ও শিশুরাও ওয়াকফের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।” তিনি এও বলেন যে বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে এবং গণতন্ত্রের পরিপন্থী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ

বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল আরও অভিযোগ করেন যে এআইএমপিএলবি মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে এবং সমাজে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “যদি তারা এই ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যায়, তবে তারা দেশের মানুষের মধ্যে ঘৃণা এবং বিভেদ তৈরি করছে।”

প্রতিবাদ কর্মসূচির লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মুখপাত্র সৈয়দ কাসিম রসুল ইলিয়াস বলেন, “সরকারের উদ্দেশ্য হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং দেশে অশান্তি ছড়ানো। আমাদের প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হচ্ছে এবং এতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”

সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললো এআইএমপিএলবি

এআইএমপিএলবি-র মতে, সরকার তাদের উদ্বেগ শুনতে প্রস্তুত নয় এবং জোর করে বিলটি পাস করানোর চেষ্টা করছে। মুজাদ্দিদি বলেন, “আমরা উন্নত ভারত দেখতে চাই, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব নয়।”

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই জটিল আকার নিচ্ছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। বিজেপি সাংসদের পাল্টা বক্তব্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করেছে। বিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন জল্পনা চলছে, তেমনই বিক্ষোভের প্রভাবও রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয়, সরকারের সঙ্গে বোর্ডের মতানৈক্য কতটা সমাধানযোগ্য হয়ে ওঠে।