Wednesday, April 23, 2025
Latestকলকাতা

১৮ বছর পর তসলিমা নাসরিনকে কলকাতায় ফেরানোর দাবি সংসদে, সওয়াল বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যের

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: প্রায় ১৮ বছর পর লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংসদে সওয়াল করলেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। সোমবার সংসদে তিনি তসলিমাকে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে কলকাতায় ফেরানোর দাবি জানান।

তসলিমার নির্বাসনের ইতিহাস

বাংলাদেশের জন্মভূমি ছেড়ে বিতর্কিত বই লেখার কারণে ভারতে আশ্রয় নেন তসলিমা নাসরিন। লেখিকার সাহসী ও স্পষ্টবাদী লেখনীর কারণে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয় এবং তাঁকে দেশছাড়া করা হয়। আশ্রয় নেন কলকাতায়, যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করছিলেন।

তবে ২০০৭ সালে তাঁর লেখা বই ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়। এই বইটি মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। কলকাতা জুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার তসলিমাকে কলকাতা ছাড়ার নির্দেশ দেয়। সেই থেকেই দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

বিজেপি সাংসদের অভিযোগ

সোমবার সংসদে তসলিমাকে ফেরানোর দাবি জানিয়ে শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “তসলিমা কলকাতাকে ভালবাসেন। তিনি বাংলায় কথা বলতে চান, বাংলায় কবিতা লিখতে চান।” শমীক আরও অভিযোগ করেন যে তৎকালীন কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট সরকার তসলিমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। তিনি বলেন, “বামেদের বন্ধুরা সেদিন চুপ ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস কেন কোনও চেষ্টা করল না, সেই প্রশ্নও রয়েই যায়।”

নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি

বিজেপি সাংসদ তসলিমাকে উপযুক্ত নিরাপত্তা দিয়ে কলকাতায় ফেরানোর দাবি জানান। তিনি বলেন, তসলিমা কলকাতাকে নিজের ঘর মনে করেন। তাঁর সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং বাংলা ভাষার প্রতি গভীর টান থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কলকাতা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।

রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ভারতে থাকার রেসিডেন্স পারমিট শেষ হয়ে গেলে তসলিমা নাসরিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। সরকারের পক্ষ থেকে সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে ২০০৭ সালের পর থেকে তসলিমা আর কলকাতায় পা রাখেননি।

তসলিমা নাসরিনের প্রতিক্রিয়া

সংসদে বিজেপি সাংসদের সওয়াল প্রসঙ্গে তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে লিখেছেন, রাজ্যসভার সাংসদ কমিউনিস্ট পার্টির গুরুদাস দাশগুপ্ত ২০০৭ সালে আমাকে নিয়ে প্রথম কথা বলেছিলেন ভারতের সংসদে। আমি তখন সবে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার দ্বারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিতাড়িত। বাংলার টানে, প্রাণের টানে যে শহরে বসবাস শুরু করেছিলাম, সেই শহর থেকে কখনও যে বিতাড়িত হবে হবে, কল্পনাও করিনি। শ্রদ্ধেয় গুরুদাস দাশগুপ্ত প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি দাবি জানিয়েছিলেন আমাকে যেন পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে দেওয়া হয়। তারপর দীর্ঘ বছর কোনও রাজনীতিক আমার কলকাতায় ফেরা নিয়ে কোনও কথা বলেননি। মাঝখানে আকাশ আট টিভি চ্যানেল থেকে সম্প্রচার হতে যাচ্ছিল দুঃসহবাস নামে আমার লেখা যে মেগাসিরিয়ালটি, সেটির সম্প্রচার বর্তমান সরকার বন্ধ করে দেয়। আজ, ১৮ বছর পর রাজ্যসভার সাংসদ ভারতীয় জনতা পার্টির শমীক ভট্টাচার্য আমাকে কলকাতায় ফেরানোর দাবি জানালেন সংসদে। জানিনা, কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কি না, তবে তিনি যে আমার কথা মনে করেছেন, মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে নিজের জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত আমি, বাংলায় লেখালেখি চালিয়ে যেতে হলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিবেশে বাস করা আমার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ, তা তিনি উপলব্ধি করেছেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।”

রাজনৈতিক মহলে জল্পনা

বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের দাবি ঘিরে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। তসলিমা নাসরিনের মতো সাহসী লেখিকাকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে সরকারের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা বাড়ছে। আপাতত দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটানো তসলিমা কি আদৌ ফিরে আসবেন তাঁর প্রিয় কলকাতায়? সেটাই এখন দেখার বিষয়।