Tuesday, November 18, 2025
সম্পাদকীয়

ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার, আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম

আমি আর পুনুর মা একদিন এই শান্তিনিবাসে বিয়ে করে এসেছিলাম, সেদিন আমার আর পুনুর মা-এর সবচেয়ে খুশির দিন ছিল। কোনোদিন এরকম দিনের সম্মুখীন হতে হবে তা আমাদের কল্পনাতীত ছিল। শান্তিনিবাসে আমি পুনুর মায়ের পছন্দের কামিনী ফুলের গাছ বসাই। গাছটি ছিল আমাদের এক সন্তানের মতো।

এরপর পুনুর মায়ের কোল আলো করে আসে পুনু। অর্থাৎ পূর্ণেন্দু। আমাদের দুই সন্তানকে অর্থাৎ কামিনী আর পুনুকে নিয়ে চলে যায় আমাদের সুখী সংসার। কিন্তু পুনু বড়ো হওয়ার সাথে সাথেই ওর পড়াশোনার খরচ বাড়তে থাকে। আমার ওই সামান্য প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি আর পারে না সংসার চালাতে। পুনুর মায়ের বড়ো ইচ্ছে পুনুকে মস্ত ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। তাই আমার উপার্জিত সমস্ত অর্থ আর পুনুর মা-এর সব গয়না বিক্রি করে পুনুকে কলকাতায় পাঠাই পড়াশোনার জন্য। আমার আর পুনুর মা-এর দিন চলত কামিনীকে ঘিরে কামিনীর শীতল ছায়ায় বসে ছেলের মঙ্গল কামনা করতে করতে। শান্তিনিবাসের দোরগোড়ায় চেঁয়ে থাকতাম কখন আমাদের ছেলে আসবে।

হঠাৎ একদিন পুনু আসে, পুনু এসে বলে তার কিছু টাকা চাই পড়াশোনার জন্য। তাই বাড়িটা বন্ধক দিতে হবে। পরে এসে সে বাড়িটা ছাড়িয়ে নেবে। ছেলের মুখ চেয়ে তাঁরা রাজি হয়ে যায়। তার অনেকদিন বাদে ছেলে এসে বলে সে বিয়ে করেছে।

কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট ও কিনেছে তাই আমাদের সেখানে নিয়ে যাবে বলে। আমরাও আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমাদের কামিনী আর শান্তিনিবাস ছেড়ে চলে আসি ছেলের হাত ধরে। পুনু কলকাতায় নিয়ে এসে আমাকে আর পুনুর মাকে একটি বাড়িতে রেখে দিয়ে বলে তোমরা এখানে থাকো, তোমাদের বউমা বাড়িতে নেই, ও আসলে তোমাদের নিয়ে যাব। আমি বাড়িতে ঢুকে দেখি অনেক আমাদের বয়সী বৃদ্ধারা আমাদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আর বলছে তাদের ছেলেরাও তাদের এইভাবে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়ে চলে গিয়েছিল। তাদের এইসব কথা শুনে আমার ভীষণ রাগ হয়। আমি তাঁদের বলি আমার ছেলে ক’দিন পরেই আমাদের নিয়ে চলে যাবে।

দেখতে দেখতে এক মাস পেরিয়ে যায় পুনু এখনও আসেনি আমাদের নিতে। আমি তাই সেখানের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পুনুকে ফোন করি। পুনু ফোন ধরতেই আমি বলি কবে নিয়ে যাবি বাবা আমাদের এখান থেকে। পুনু বলে তোমরা ওখানেই থাকো। ওটাই তোমাদের ভালো থাকার জায়গা। তোমাদের বউমা চায় না তোমাদের সাথে থাকতে, তাই তোমাদের ওখানে রাখলাম। এই কথা শুনে আমি চোখের জল ধরে রাখতে না পেরে বলি তুই আমাদের শান্তি নিবাসে রেখে আয় ওখানেই আমরা ভালো থাকব। পুনু বলে ওই বাড়ি নাকি সে বিক্রি করে দিয়েছে। এই কথা শুনে আমি আর কিছু বলতে পারি না। আমি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ি।

পুনুর মাকে বললে পুনুর মা জেদ ধরে বসে সে শান্তি নিবাসে যাবে, তাঁর কামিনীকে দেখতে। আমি আর পুনুর মা শান্তি নিবাসের সামনে গিয়ে দেখি বাড়িটিতে এখন অন্য লোকের বসবাস। কামিনীকে দেখে আমরা তার নীচে গিয়ে বসি। তারপর আমি আর পুনুর মা ঘুমের ওষুধ খেয়ে চির ঘুমের দেশে হারিয়ে যাই। – বর্ষা দাস

Somoresh Sarkar

গুরুদাস কলেজ থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতক এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ডিজিটাল সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত।