বাংলাদেশের রাজবাড়ীর আলোকদিয়া গ্রামে পুকুরের ওপর ১০ হাজার বাঁশ দিয়ে নির্মিত ৩ শতাধিক প্রতিমা
সংগ্রাম দত্ত:
—————-
বাংলাদেশের রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে পুকুরের ওপর ১০ হাজার বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আটটি মণ্ডপ। দুই তলা উচ্চতার মণ্ডপগুলোতে তিন শতাধিক প্রতিমা প্রদর্শনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন আয়োজকরা। মূল পূজার সঙ্গে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী ও কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের লীলাসহ বেশ কয়েকটি কাহিনী তুলে ধরা হবে। এর পাশাপাশি বর্তমান সরকারের চালু করা মেট্রোরেল প্রকল্পও ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
গত তিন মাস ধরে নির্মাণ শ্রমিক মণ্ডপগুলো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসছেন। প্রতিমাগুলোতে চলছে রংয়ের কাজ। আয়োজকরা মনে করছেন ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখতে দেশে ও বিদেশ থেকে আসবেন পাঁচ-ছয় লাখ মানুষ।
বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের পানির ওপর বাঁশ দিয়ে আটটি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে।
বেশ কয়েকটি মণ্ডপে স্থাপন করা হয়েছে প্রতিমা। মন্দিরে প্রবেশ করলে ১৪০০ ফুট পায়ে হেঁটে শেষ করতে হবে প্রতিমা দর্শন। মন্দিরে প্রবেশের সময় চোখে পড়বে শিবের বিশালাকৃতির মূর্তি।
এরপর মূল প্রবেশ পথ দিয়ে কিছু দূর এগুলো দেখা যাবে বড় মন্দির।
সেখানে তুলে ধরা হয়েছে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী। দক্ষযজ্ঞ থেকে শুরু করে সতীর পুনর্জন্ম ও ৫১টি শক্তিপীঠের কাহিনী সাজানো হয়েছে মূর্তিগুলো দিয়ে। এরপর পুকুরের ওপর তৈরি করা হয়েছে ওভার ব্রিজ। ব্রিজের দুই পাশে ফোয়ারার মধ্য দিয়ে সামনের মণ্ডপে মেট্রোরেলের ভেতরে রাখা হয়েছে ২০ জন মনীষী। সেগুলো দেখে সামনে এগুলে দেখা যাবে সনাতন ধর্মের আরেক কাহিনী। সেটি শেষ করতে পরের মণ্ডপে দেখা যাবে কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের শৈশব। এরপর দেবীর ঘটকে বিদায়ের আরেকটি দৃশ্য। সেটি শেষে পৌঁছে যাওয়া যাবে মূল দুর্গা মণ্ডপে।
এরই মধ্যে আয়োজন দেখতে আসতে শুরু করেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থীরা। অনেকে মনে করেন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির এই আয়োজন ব্যতিক্রমী। পূজার আগে কিভাবে মন্দিরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি দেখতেই এখানে আসা। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে মন্দিরগুলো সজ্জিতকরণ হলে অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। সনাতন ধর্ম সম্পর্কে শেখা যায় আলোকদিয়ার এই পূজা থেকে।
বাঁশ দিয়ে মন্দির তৈরির কারিগর বালিয়াকান্দি উপজেলার তুলসীবরাট গ্রামের জ্ঞানেন্দ্র নাথ মণ্ডল। ২০ শ্রমিক ৩ মাস ধরে কাজ করে শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসছে। কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কাঠের পাটাতন দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন কাপড় আর সোলা দিয়ে মন্দিরগুলোর সজ্জিতকরণ করা হবে। ষষ্ঠীর আগের দিন সব আয়োজন শেষ করা হবে। এ বছর মন্দির তৈরি করতে ১০ হাজার বাঁশ ও অনেক কাঠের তক্তা ব্যবহার করা হয়েছে। এই আয়োজন দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়োজন।’
জানা গেছে, প্রতি বছর এখানে ব্যতিক্রমী আয়োজন কর হয়। করোনার পর তিন বছর বড় পরিসরে এই আয়োজন করা হয়নি। এ বছর আবার শুরু করা হয়েছে। আটটি মণ্ডপে সনাতন ধর্মের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হবে। বাঁশ, কাঠ, কাপড় ও সোলা দিয়ে মণ্ডপগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের ভেতরে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে মেট্রোরেলের ভেতরে মাটির তৈরি মনীষীদের ভাস্কর্য রাখা হয়েছে। তাদের জীবনাদর্শ সম্পর্কে মানুষ যেন জানতে পারেন। সেই তথ্য রাখা হয়েছে। লক্ষ্মী পূজা পর্যন্ত এই আয়োজন থাকবে।’
বালিয়াকান্দি থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বালিয়াকান্দির প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপত্তায় আনসার, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে। তাছাড়া পুলিশ প্রতিটি মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে বড় পরিসরে দুর্গা পূজা হবে। সেখানে আমাদের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’