Monday, November 17, 2025
Latestরাজ্য​

দুর্গাপুর গণধর্ষণকাণ্ডে ধৃত তৃণমূল নেতার ছেলে, ওই হাসপাতালেরই অস্থায়ী কর্মী, পুরসভার অস্থায়ী কর্মী! জানুন ৫ অভিযুক্তর পরিচয়

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ওড়িশা থেকে পড়তে আসা এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, ধৃতদের প্রত্যেকেই ওই মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ওই হাসপাতালের প্রাক্তন নিরাপত্তারক্ষী, এক হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী এবং এক স্থানীয় তৃণমূল নেতার ছেলে।

রবিবার রাতে পুলিশ প্রথমে শেখ রেয়াজউদ্দিন, অপু বাউড়ি এবং ফিরদৌস শেখকে গ্রেফতার করে। পরদিন, সোমবার গ্রেফতার হয় আরও দুই অভিযুক্ত — শেখ নাসিরউদ্দিন ও সফিক শেখ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩১ বছর বয়সি শেখ রেয়াজউদ্দিন দুর্গাপুর বি জোনের বিজড়া ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা। বছর কয়েক আগে ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালেই নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করত সে। রেয়াজউদ্দিনের বৌদি বলেন, “পুলিশ এসে দেওরকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। ও নিজের ইচ্ছেয় কাজ ছেড়ে দিয়েছিল। এখন কিছু করে না, এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায়।”

অন্যদিকে, ২৩ বছর বয়সি ফিরদৌস শেখ দুর্গাপুরের একটি মিশন হাসপাতালে জেনারেল ডিউটি অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করত। পুলিশের দাবি, তার কাছ থেকেই উদ্ধার হয়েছে নির্যাতিতার মোবাইল ফোন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ফিরদৌস এজেন্সির মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত, তাই তারা ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি জানেন না।

বিজড়া ডাঙাপাড়ারই বাসিন্দা ২১ বছরের অপু বাউড়ি পেশায় দিনমজুর। তার স্ত্রী মামণির দাবি, “আমরা একসঙ্গে ঘুমোচ্ছিলাম। আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”

ধৃত শেখ নাসিরউদ্দিনের বয়স ২৩। তিনি দুর্গাপুর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, নাসিরউদ্দিনের বাবা তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী এবং এলাকায় দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।

পঞ্চম অভিযুক্ত সফিক শেখের বয়স তিরিশের কাছাকাছি, সেও ওই এলাকারই বাসিন্দা।

এই ঘটনার রাজনৈতিক রেশও ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে। সোমবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি তৃণমূল-যোগের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “আজকে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি দুর্গাপুর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী, তৃণমূলের ক্যাডার। ওর বাবা পার্টির পোর্টফোলিও হোল্ডার।” শুভেন্দুর অভিযোগ, “এই গণধর্ষণের সঙ্গে সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের পদাধিকারী জড়িত। শাসক যখনই শোষকে পরিণত হয়, তখন আইনের শাসন ও ন্যায়ের আশা করা যায় না।”

পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিতার মেডিক্যাল রিপোর্টে যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে। আপাতত ৫ অভিযুক্তকেই জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে বিশেষ দল।

জাতীয় মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলাটি আমলে নিয়েছে, দ্রুত দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে এবং তদন্ত পর্যালোচনার জন্য সদস্য ডঃ অর্চনা মজুমদারকে পাঠিয়েছে।

এদিকে, নিউজ বাংলার খবর অনুযায়ী, দুর্গাপুর বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গণধর্ষণ মামলার সাথে জড়িত ৫ জন ‘দুধেল গাই’ অর্থাৎ মুসলিম। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দুধেল গাই’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তার বক্তৃতার প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে এবং মিডিয়া এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই বাক্যাংশটিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মে মাসে, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সাফল্যের পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ‘দুধেয়া গাই’ বাক্যাংশটি ব্যবহার করেছিলেন । তিনি বলেছিলেন, “আমি মুসলিমদের তুষ্ট করি… ১০০ বার করবো কারণ দুধ দেওয়া গরুর লাথি খাওয়ায় কোনও ক্ষতি নেই”। তিনি সাফ জানান, তিনি এবং তাঁর দল সংখ্যালঘুদের সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। 

এই গণধর্ষণ কান্ড সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা বাংলায় এই ধরণের ঘটনাগুলিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিই। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। কিন্তু কীভাবে নির্যাতিতা ওই ছাত্রী অত রাতে ক্যাম্পাস থেকে বেরোতে পারে? কীভাবে সে রাত ১২.৩০ টায় বাইরে এল? এটি একটি বনাঞ্চল। বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে অবশ্যই তার ছাত্রদের যত্ন নিতে হবে।”

নির্যাতিতার বাবা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে তাঁর মেয়ে নিরাপদ নয়। তাঁর প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে। তাঁকে ওড়িশায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। ইতিমধ্যেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি নির্যাতিতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সবরকম ভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। 

জানা গেছে, ঘটনার রাতে দ্বিতীয় বর্ষের ওই ডাক্তারি পড়ুয়ার সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়েছিলেন তারই এক সহপাঠী। নির্যাতিতার বাবা-মায়ের অভিযোগ, ঘটনার সময়ে নির্যাতিতাকে অভিযুক্তদের কাছে ফেলে পালিয়ে আসেন ওই সহপাঠী। কেন তিনি এমনটা করেছিলেন, ওই রাতে ঠিক কী কী দেখেছিল সে, এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাকে।

গণধর্ষণের পর অভিযুক্ত ধর্ষকরা নির্যাতিতার ফোন থেকেই সহপাঠীকে কল করে ঘটনাস্থলে ডাকে। ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময়ে সে কী দেখেছিল? কারা তাকে ফোন করেছিল, কারা সেখানে উপস্থিত ছিল, সবটাই জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। পাশপাশি নির্যাতিতার বয়ানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে সহপাঠীর বয়ান।

অভিযুক্তদের নিয়ে ইতিমধ্যেই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেছে পুলিশ। সবটাই ভিডিওগ্রাফি করা হচ্ছে। 

অভিযুক্ত রেয়াজুদ্দিন এবং নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ঘটনার রাতের পোশাক উদ্ধার করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই তাদের পোশাকগুলি ফরেন্সিকে পাঠানো হয়েছে। বুধবার অভিযুক্তদের মেডিকো-লিগাল পরীক্ষা করা হবে

তথ্যসূত্র- Struggle for Hindu Existence