Wednesday, April 23, 2025
FEATUREDআন্তর্জাতিক

প্যালেস্টাইনের সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের সমর্থক, ভারতীয় শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করলো আমেরিকা 

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: হিংসা ও সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় স্কলার রঞ্জনি শ্রীনিবাসনের (Ranjani Srinivasan) ভিসা বাতিল করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (DHS) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ৫ মার্চ স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাঁর এফ-১ স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করে। এরপর ১১ মার্চ, সিবিপি হোম অ্যাপ ব্যবহার করে শ্রীনিবাসন স্বেচ্ছায় আমেরিকা ছেড়েছেন।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনার ডক্টরাল শিক্ষার্থী ছিলেন রঞ্জনি শ্রীনিবাসন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্যালেস্টাইনের সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের সমর্থক এবং সেই সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। 

মার্কিন প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পর মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, “আমেরিকায় বসবাস ও পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। যদি কেউ সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের পক্ষে কথা বলে, তাহলে তাদের এই দেশে থাকার কোনও অধিকার নেই।” তিনি আরও বলেন, “আমি আনন্দিত যে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী, যিনি সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হয়েছেন।”

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও কড়াকড়ি

গত বছর গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ব্যাপক ছাত্রবিক্ষোভ হয়েছিল। বেশ কিছু জায়গায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষও বাধে। এরপর থেকেই মার্কিন প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণে কড়াকড়ি বাড়ায়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, তারা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটর করছে, যাতে কেউ সন্ত্রাসবাদে মদত দিলে তাদের ভিসা বাতিল করা যায়। ইতিমধ্যে হামাস-সমর্থক শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের আমেরিকা থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেডারেল তহবিল বাতিলের ঘোষণা

এই ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল প্রত্যাহার করা হবে। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ইহুদি শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করা হচ্ছে। প্রশাসনের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয়।

গ্রেফতার এক পড়ুয়া

শুধু রঞ্জনি শ্রীনিবাসনই নন, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের অভিযোগে আরেক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ধৃত শিক্ষার্থীর নাম লিকা কোরদিয়া। জানা গেছে, ২০২২ সালেই তার ভিসা বাতিল করা হয়েছিল, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উপস্থিতির হার খুবই কম ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি অবৈধভাবে আমেরিকায় থেকে গিয়েছিলেন।

প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক

এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে। অনেকেই বলছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের প্রতি সহানুভূতি জানানো উচিত নয়। আবার অনেকে মনে করছেন, প্রশাসন অতিরিক্ত কড়াকড়ি করছে, যা শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেবে।

পড়ুয়াদের উপর কঠোর নজরদারি

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে আমেরিকায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর প্রশাসনের কঠোর নজরদারি যে বাড়তে চলেছে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।