Tuesday, November 11, 2025
Latestকলকাতা

ভুয়ো নথি দিয়ে কলকাতায় ১৩০টি পাসপোর্ট, গ্রেফতার ১০, জানালো পুলিশ 

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ভুয়ো নথি ব্যবহার করে আসল পাসপোর্ট তৈরির এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে কলকাতায়। পুলিশ জানিয়েছে, ভুয়ো নথির মাধ্যমে অন্তত ১৩০টি পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।

কিভাবে ফাঁস হলো জালিয়াতি চক্র?

২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয় যে, ভুয়ো নথি জমা দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এরপর কলকাতা পুলিশের তরফে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে উৎপল মাহাতো, উদয় মাহাতোসহ মোট ৩৭ জনের নাম উঠে আসে।

তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমেই নথিগুলির সত্যতা যাচাই করে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তদন্তে ধরা পড়ে যে, প্রায় সমস্ত নথিই জাল। এরপর পঞ্চসায়র ডাকঘরে অভিযান চালিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, এটি ছিল একটি সংগঠিত চক্রের কাজ।

চক্রের পদ্ধতি ও মূল অভিযুক্তরা

পুলিশের দাবি, এই জালিয়াতি চক্র অত্যন্ত সুসংগঠিত ছিল। চক্রটি ভুয়ো নথি তৈরি করা থেকে শুরু করে পুলিশ ভেরিফিকেশন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াই নিয়ন্ত্রণ করত। প্রতিটি ধাপের জন্য আলাদা দর নির্ধারণ করা ছিল। এক একটি ভুয়ো পাসপোর্ট বিক্রি করা হত ২ – ৩ লক্ষ টাকায়।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে যে, পঞ্চসায়র ডাকঘরের একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মী এই ভুয়ো পাসপোর্টগুলি একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতেন। সেই ব্যক্তি মোটা টাকার বিনিময়ে পাসপোর্টগুলি বিক্রি করতেন।

গ্রেফতার ও শাস্তি

এই ঘটনার তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ সদ্য অবসরপ্রাপ্ত DIB আধিকারিকসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের মধ্যে ৮ জন এখনও জেলবন্দি রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

বেআইনি কার্যকলাপের বিস্তার

এই ঘটনার পর কলকাতায় ভুয়ো নথি ব্যবহার করে পাসপোর্ট তৈরির চক্র নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের জাল পাসপোর্ট ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবাদ বা অবৈধ কার্যকলাপে ব্যবহৃত হতে পারে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, এই ধরনের অপরাধ রুখতে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে এবং পাসপোর্ট যাচাই প্রক্রিয়া কঠোর করা হবে। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলেছেন, “এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কোনও ভাবেই ছাড়া হবে না। তদন্ত চলছে এবং আরও অনেকের নাম সামনে আসতে পারে।”

জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান

পুলিশ সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছে, পাসপোর্ট তৈরি করতে কোনো অবৈধ পথে না যাওয়ার জন্য এবং কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে অবিলম্বে প্রশাসনকে জানানোর জন্য।

নজরদারি বাড়ানো হয়েছে 

এই ঘটনার পর পাসপোর্ট অফিস এবং স্থানীয় প্রশাসনও কড়া নজরদারি বাড়িয়েছে। কলকাতায় ভুয়ো নথি ব্যবহার করে পাসপোর্ট জালিয়াতির ঘটনা যে কত বড় মাপের, তা তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গেই আরও স্পষ্ট হচ্ছে।