Tuesday, April 23, 2024
সম্পাদকীয়

ফ্যাসিবাদী কমিউনিস্ট রাশিয়ার পুনরুত্থানের প্রতিচ্ছবি – মাইক্রো চেরনোবিল

২০১৯ সালে রাশিয়ায় নতুন করে একটি পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল যাকে চেরনোবিলের সাথে তুলনা করা হয়। পারমাণবিক দুর্ঘটনার কথা উঠলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্ঘটনায় কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে। এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, রাশিয়ার নিয়োনোক্সায় একটি পারমাণবিক রকেট পরীক্ষার সময় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে, যার ফলে অন্তত ৭ রাশিয়ান নিহত হয় এবং একটি পুরো শহরকে খালি করতে বাধ্য করা হয়। রাশিয়ান আবহাওয়া পরিষেবার অনুযায়ী, এই পারমাণবিক দুর্ঘটনার ফলে বিকিরণের মাত্রা প্রায় ১৬ গুণ বেড়ে যায়, ফলে শহরটির সমস্ত অধিবাসীকে রকেটটির নিউক্লিয়ার কম্পোনেন্টস এর হাত থেকে বাঁচার জন্য এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

যাই হোক, এই ইভ্যাকুয়েশনের মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই, রাশিয়ান সেনাবাহিনী তাদের আদেশ বাতিল করে দেয়। শহরটির অন্তত ৫০০ বাসিন্দা বিস্ফোরণের ধাক্কা অনুভব করেছিল। বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্ট বিভ্রান্তির মাঝে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর এই ঘোষণা ঘটনাটির দৃশ্যপট বদলে দেয় এবং ফলে এই নিউক্লিয়ার দুর্ঘটনার খবর বহির্বিশ্বে খুব একটা আলোচনার মুখ আর দেখতে পায়নি। ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে এই খবর খুব একটা আর গুরুত্ব পায়নি। এই নিউক্লিয়ার দুর্ঘটনার ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার উইপন প্রোগ্রাম নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা, কিন্তু তৎকালীন বৈশ্বিক পরিস্থিতির ফলে তা অন্তরালে থেকে যায়। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, নিয়োনোস্কার বিস্ফোরণটি 9M730 বুরেভেস্তনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ারড ক্রুজ মিসাইলের ব্যর্থ পরীক্ষার ফলে ঘটেছে। আশঙ্কার বিষয় এই যে, এটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ডুমসডে উইপন, যাকে ন্যাটো SSC-X-9 স্কাইফল বলে অভিহিত করে।

রাশিয়ান সরকার বিকিরণের মাত্রা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত স্পাইক রিপোর্ট করার পরে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই বিবৃতিতে জোর দেওয়া শুরু করে যে, নিয়োনোস্কায় কোনও বিকিরণই নির্গত হয়নি। রাশিয়ান সরকারের এই বিবৃতিটি বাস্তবে সোভিয়েত রাশিয়ার ফ্যাসিবাদী কমিউনিস্ট রাজের এক প্রতিফলন যেখানে সরকারের সমস্ত অপরাধ ও বিতর্কিত বিষয়গুলো বেমালুম চেপে দেওয়া হতো। ফলে নিয়োনোস্কার সাধারণ মানুষ আরও বেশি অস্বস্তি ও আশঙ্কায় দিন যাপন করছে।

চিত্রে: 9m730 burevestnik nuclear-powered cruise missile (প্রতীকী ছবি)

এইটুকু পর্যন্ত পড়ার পর পাঠকের যদি এই ঘটনাকে বড় সমস্যা মনে হয়, তাহলে বলে রাখছি, এই ঘটনাটি মূল সমস্যার কিঞ্চিৎ অংশ মাত্র। বাস্তবে এই যে শহর ছেড়ে অন্যত্র সরে যাওয়ার যে আদেশ, তা নিয়োনোক্সার বাসিন্দাদের জন্য নতুন কিছু নয়। শহরটির অধিবাসীরা প্রায়শই উচ্ছেদের আদেশ পান কোন না কোন ফিল্ড টেস্টের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য। একটি স্থানীয় এজেন্সির মতে, নিউক্লিয়ার দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা করা ডাক্তারদেরকে বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাদেরকে দুর্ঘটনার বিষয়াদি অপ্রকাশ্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করানো হয়। ২০২২ সালে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন দেখে এটুকু ধারণা করা যায় যে, ক্রিমিয়া ইস্যু ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর থেকে ইউক্রেনকে লক্ষ্য রেখে নিয়োনোক্সার মতো অসংখ্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। অন্যদিকে গতকাল রাশিয়ান পার্লামেন্টে ভীনদেশে সেনা পাঠানোর প্রস্তাব পাশ হওয়ার ঘটনা এই ধারণাকে আরও দৃঢ় করে। পারমাণবিক দুর্ঘটনার নিরিখে শুধু চেরনোবিল-ই কি একমাত্র ভয়ঙ্কর? নাকি নিয়োনোক্সার মতো মাইক্রো চেরনোবিলগুলো আরও বেশি ভয়ঙ্কর?

(লেখক: সায়ন দে; মতামত লেখকের নিজস্ব)