‘ভূতুড়ে ভোটার’ খোঁজার নামে হিন্দু ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করছে তৃণমূল, সবর বিজেপি
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘ভূতুড়ে ভোটার’ ইস্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো নাম সরানোর জন্য দলীয় কর্মীদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এই পদক্ষেপকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছে বিজেপি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস পরিকল্পিতভাবে হিন্দু ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁদের দাবি, বিশেষ করে হিন্দিভাষী হিন্দুদের ভোট কেটে বাদ দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মমতার দাবি: ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে হবে
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের কর্মীসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিযোগ করেন, ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ঢোকানো হয়েছে এবং এর পেছনে বিরোধী শিবিরের কারসাজি থাকতে পারে। তাই তিনি দলের কর্মীদের নির্দেশ দেন, প্রতিটি বুথের ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখতে হবে এবং কোথাও অস্বাভাবিকতা থাকলে তা সংশোধনের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
তাঁর দাবি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার, গুজরাটের অনেক ব্যক্তির নাম বেআইনিভাবে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, ‘‘ভোটার লিস্ট ক্লিন করতে হবে, যাতে প্রকৃত ভোটাররাই ভোট দিতে পারেন।’’
বিজেপির পাল্টা অভিযোগ: হিন্দুদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত
বিজেপি নেতারা এই উদ্যোগকে সরাসরি হিন্দু ভোটারদের বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা বলে অভিহিত করেছেন। সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘ভোটের এক বছর আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকা নিয়ে যে অবস্থান নিয়েছেন, তাতে হিন্দু বাঙালিদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তৃণমূল কংগ্রেস পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের হিন্দিভাষী হিন্দুদের ভোট কাটার জন্য এখন থেকেই চক্রান্ত চলছে। কলকাতা, হাওড়া, শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুরের মতো এলাকায় হিন্দুদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। তাই সকল হিন্দু ভোটারদের বলব, ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় আপনার নাম আছে কি না, তা খতিয়ে দেখুন।’’
শুভেন্দুর দাবি আধার কার্ড ও EPIC কার্ডের লিঙ্কিং বাধ্যতামূলক করা উচিৎ
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা থেকে হিন্দুদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই প্রক্রিয়া রুখতে আধার কার্ড ও ইপিক (EPIC) কার্ডের লিঙ্কিং বাধ্যতামূলক করা উচিত।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যেভাবে রেশন কার্ডের জন্য বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন হয়, ঠিক তেমনভাবেই ভোটারদের বায়োমেট্রিক যাচাই করা উচিত, যাতে ভূতুড়ে ভোট বন্ধ হয়।’’
তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ: বিজেপির মদতে ভুয়ো ভোটার বেড়েছে
তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির মদতে ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার ঢোকানো হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি দাবি করেছেন, ‘‘কমিশনের আশীর্বাদ নিয়ে দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের মতো বাংলাতেও অনলাইনে ভূতুড়ে ভোটার ঢোকানো হচ্ছে। বাংলার ভোটারের একই এপিক কার্ড ব্যবহার করে হরিয়ানা ও গুজরাটের লোকদের নাম তালিকায় ঢোকানো হচ্ছে।’’
ভোটের আগে রাজনৈতিক লড়াই আরও তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত
‘ভূতুড়ে ভোটার’ ইস্যুকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। একদিকে তৃণমূল চাইছে ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো নাম বাদ দিতে, অন্যদিকে বিজেপি মনে করছে, এর পেছনে হিন্দুদের ভোটাধিকার খর্ব করার ষড়যন্ত্র রয়েছে।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই এই বিতর্ক তীব্র হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু ভোটার তালিকার বিশুদ্ধকরণের বিষয় নয়, বরং ভোটব্যাঙ্ক রক্ষার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। আগামী দিনে এই ইস্যুতে আরও তীব্র রাজনৈতিক লড়াই দেখা যেতে পারে।