এবার দেশজুড়ে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ লাগু করা হোক, পর্যবেক্ষণ কর্ণাটক হাইকোর্টের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ (Uniform Civil Code) কার্যকর নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই বড়সড় পর্যবেক্ষণ করল কর্নাটক হাই কোর্ট। সম্প্রতি এক মুসলিম মহিলার সম্পত্তি বণ্টন সংক্রান্ত মামলায় রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সঞ্জীব কুমার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের প্রস্তাব দেন। তার মতে, এই আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ভারতের সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের সমতার আদর্শ বাস্তব রূপ পাবে।
বিচারপতি সঞ্জীব কুমার মুসলিম পার্সোনাল ল’ এবং সাধারণ আইন ব্যবস্থার মধ্যকার বৈষম্যের বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “হিন্দু নারীরা যেমন উত্তরাধিকার, বিবাহ বা সম্পত্তির ক্ষেত্রে পুত্রদের সমান অধিকার পান, মুসলিম নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই সেই সমানাধিকারে বঞ্চিত হন। এ ধরনের লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কোনও বিকল্প নেই।”
আদালতের মতে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি শুধু লিঙ্গভিত্তিক নয়, ধর্মভিত্তিক বৈষম্যও দূর করবে। এটি সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে এই আইন ভারতীয় রাষ্ট্রের মূল মূল্যবোধ—ন্যায়, স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও জাতীয় সংহতির প্রতিফলন ঘটাবে।
এই পর্যবেক্ষণের পটভূমিতে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যেই উত্তরাখণ্ড ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন কার্যকর করেছে। ওই রাজ্যে নতুন আইনের আওতায় সন্তানদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ বছর এবং বিয়ের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রদায়ভিত্তিক রীতি-রেওয়াজ মেনে বিয়ে করার সুযোগও রাখা হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের পর গুজরাট ও গোয়া রাজ্যেও এই আইন চালুর প্রস্তুতি চলছে। সবকিছু মিলিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে এক নতুন দিকচিহ্ন তৈরি হয়েছে। ‘এক দেশ, এক আইন’-এর লক্ষ্যে সরকার যে অগ্রসর হচ্ছে, কর্নাটক হাই কোর্টের প্রস্তাব তাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে কৌশলগতভাবে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কেবলমাত্র একটি আইন নয়, এটি ভারতের নাগরিকদের মধ্যে সমতার ভিত্তি গড়ে তোলার একটি প্রয়াস। তবে এটি কার্যকর করতে হলে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আস্থা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।