Wednesday, November 19, 2025
Latestদেশ

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করায় ৭১ বছরের ইউটিউবারকে গ্রেফতার করলো স্ট্যালিনের পুলিশ, ২০ দিনের বেশি রয়েছেন জেলে

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: তামিলনাড়ুতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কোথায়? ৭১ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার ও ইউটিউবার আর. বরদারাজনকে (R. Varadharajan) গ্রেফতার করেছে চেন্নাই পুলিশ। এই ঘটনায় তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক তাপমাত্রা বেড়েছে।

বরদারাজন ‘নেতাজি টিভি‘ নামের ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত রাজনৈতিক বিশ্লেষণমূলক ভিডিও আপলোড করেন। তাঁকে গত ৭ অক্টোবর চেন্নাই সাউথ সাইবার ক্রাইম শাখা গ্রেফতার করে। অভিযোগ, তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি এন. সেন্টিলকুমারের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করেছেন। এক ভিডিওতে, যেখানে তিনি বিচারপতির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং দাবি করেন, বিচারপতি এন. সেন্টিলকুমার শাসক দল ডিএমকে’র ঘনিষ্ঠ।

পটভূমি

এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় ২৭ সেপ্টেম্বর। করুরে পদপিষ্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অভিনেতা-রাজনীতিক বিজয়ের দল তামিলাগা ভেত্রি কাজগম (TVK)-এর সমাবেশে প্রায় ৪১ জনের মৃত্যু হয়। আয়োজকদের দাবি অনুযায়ী, অনুমতি নেওয়া হয়েছিল যত মানুষের জন্য তার থেকে কয়েকগুণ মানুষ উপস্থিত হয়, যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

পরবর্তীতে আদালতে মামলার শুনানির সময় বিচারপতি সেন্টিলকুমার বিজয়ের নেতৃত্ব ও দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করেন। সেই মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক।

ইউটিউবারকে গ্রেফতার 

এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ইউটিউবার বিচারপতির মন্তব্যের সমালোচনা করেন। পুলিশের অভিযোগ— বরদারাজনের পোস্ট শুধু সমালোচনাই নয়, বরং মানহানিকর ও উত্তেজনাপূর্ণ। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইন ও জনশান্তি ভঙ্গ সংক্রান্ত ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

একই সঙ্গে অন্যান্য অনলাইন বিশ্লেষক যেমন- ফেলিক্স জেরাল্ড ও মারিদাসের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে জেরাল্ডের রিমান্ড আদালত নাকচ করে দেয় এবং মারিদাসকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু বরদারাজন এখনও বিচারাধীন হেফাজতেই রয়েছেন।

জামিনে বিলম্ব ও সমালোচনার ঝড়

গত সপ্তাহে বরদারাজনের জামিনের শুনানি মাদ্রাজ হাইকোর্টে শুরু হয়। সরকারি কৌঁসুলি অতিরিক্ত নির্দেশনার জন্য সময় চেয়েছে। যার ফলে মামলার পরবর্তী শুনানি সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে ২০ দিনের বেশি জেল হেফাজতে রয়েছেন বরদারাজন।

মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা এই বিলম্বকে ‘ইচ্ছাকৃত কৌশল’ বলছেন। তাঁদের মতে, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই এক নিদর্শন।

স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধাদান 

আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, একটি ইউটিউব ভিডিওর জন্য একজন প্রবীণ নাগরিককে এতদিন ধরে জেলে রাখার ঘটনা রাষ্ট্রীয় সহনশীলতার সীমা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। তাঁদের মতে, এটি মুক্ত মতপ্রকাশের পরিসরে এক ‘চিলিং এফেক্ট’ তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সমালোচকদের আরও ভয় দেখাবে।

অন্যদিকে, তামিলনাড়ু পুলিশ দাবি করছে— করুরের মর্মান্তিক ঘটনাকে ঘিরে ভুয়ো তথ্য ও ঘৃণা ছড়ানো রোধেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বিরোধীদের মতে, এই গ্রেফতারই প্রমাণ করে যে স্ট্যালিন সরকার এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করছে।

তথ্যসূত্র: The Commune