ভুয়ো নথি ব্যবহার করে জাল সার্টিফিকেট, ১৯৬ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে মামলা মহারাষ্ট্রে
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মহারাষ্ট্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও জাল নথি তৈরির বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের কড়া অভিযান। ভুয়ো পরিচয়পত্র ও সরকারি শংসাপত্র ব্যবহার করে রাজ্যে বসবাসের অভিযোগে ১৯৬ জন বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগর (পূর্বতন ঔরঙ্গাবাদ) জেলায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়ো পরিচয়পত্র, আবাসিক শংসাপত্র ও অন্যান্য সরকারি নথি ব্যবহার করে মহারাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। এই নথির ভিত্তিতেই তারা কাজকর্ম, বাসস্থান এবং বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছিল।
রাজ্যজুড়ে বিশেষ অভিযান
রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালে শুরু হওয়া রাজ্যজুড়ে বিশেষ ভেরিফিকেশন অভিযানের অংশ হিসেবেই এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই অভিযানের আওতায় চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত ৪২ হাজারেরও বেশি জাল নথি বাতিল করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, বাতিল হওয়া নথির বড় অংশই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা তৈরি।
BREAKING: 196 illegal Bangladeshi nationals booked for obtaining fake certificates using forged documents in Chhatrapati Sambhajinagar, MH.
FIRs registered and certificates canceled amid police crackdown on forged documents.@MahaPolice pic.twitter.com/09XT8HfFis
— Angry Saffron (@AngrySaffron) December 13, 2025
এই ভুয়ো নথিগুলির মাধ্যমে ভোটার কার্ড, আধার সংক্রান্ত কাগজপত্র, রেশন কার্ড এবং অন্যান্য সরকারি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
সংগঠিত জালিয়াতি চক্রের হদিস
ছত্রপতি সম্ভাজিনগরের পুলিশ আধিকারিকদের সাংবাদিক বৈঠক করেন। একাধিক নথির তালিকা ও প্রমাণ পেশ করেন আধিকারিকরা।
পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, “এই জাল নথিগুলি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি সংগঠিত জালিয়াতি চক্রের কাজ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দালাল ও মধ্যস্থতাকারীদের একটি সক্রিয় নেটওয়ার্ক কাজ করছিল।”
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্তদের অনেকেই প্রথমে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর সীমান্তবর্তী রাজ্য বা বড় শহর থেকে তারা নিজেদের জন্য ভুয়ো পরিচয় তৈরি করে নেন।
নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা
তদন্তকারীদের মতে, এই ধরনের জাল নথি শুধু আর্থিক জালিয়াতির বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যতে বড় ধরনের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। পরিচয় গোপন রেখে দীর্ঘদিন রাজ্যে বসবাস করা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ফাঁক সৃষ্টি করে বলে মনে করছে প্রশাসন।
আগের ঘটনার ধারাবাহিকতা
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের শেষ দিকে মহারাষ্ট্রে অভিযানে রাজ্যের সন্ত্রাসদমন শাখা Maharashtra ATS ৪৩ জনকে গ্রেফতার করেছিল। সেই মামলাতেও ভুয়ো আধার ও পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের একাংশ বর্তমান ঘটনাকে সেই অভিযানেরই ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছেন।
কঠোর আইনি পদক্ষেপের পথে প্রশাসন
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা এবং জাল নথি তৈরি ও ব্যবহারের অভিযোগে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে বিদেশি নাগরিক আইন অনুযায়ী পুশব্যাক প্রক্রিয়া শুরু কররে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এই খবর সামনে আসার পর সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
প্রশাসনের বার্তা
রাজ্য সরকারের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এই অভিযান আরও জোরদার করা হবে। সীমান্তবর্তী জেলা থেকে বড় শহর সব জায়গাতেই নথি যাচাই ও ভেরিফিকেশন ড্রাইভ চালানো হবে।
মহারাষ্ট্রে ১৯৬ জন বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে এই মামলা মহারাষ্ট্র তথা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন করে আলোড়ন ফেলেছে।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ভুয়ো নথির মাধ্যমে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কোনও সুবিধা নেওয়া হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত অন্যদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।


