আফগানিস্তানে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করলো তালিবান সরকার
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: আফগানিস্তানে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর তালিবান সরকারের নতুন বিধিনিষেধ। শরিয়ত আইন বিরোধী এবং তালিবানদের নীতি বিরোধী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যসূচি থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো নারীদের লেখা বই। সম্প্রতি উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে নারীদের লেখা বই ও নারী-অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত পাঠ সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।
৬৮০টি বই ‘শরিয়াবিরোধী ও তালেবান নীতির পরিপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত
তালিবানের নতুন নির্দেশিকায় দেখা গেছে, মোট ৬৮০টি বইকে ‘শরিয়াবিরোধী ও তালেবান নীতির পরিপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৪০টি বই নারীদের লেখা। এমনকি “সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি”–র মতো বৈজ্ঞানিক বইও এই নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে।
নিষিদ্ধ করা হয়েছে আরও ১৮টি বিষয়, যার মধ্যে ছয়টি সরাসরি নারীদের নিয়ে। এগুলির মধ্যে রয়েছে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন এবং উইমেন’স সোসিওলজি।
নারীবিদ্বেষী নীতি জোরদার
নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধকরণের পাশাপাশি মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি সম্পর্কিত পাঠদানেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালিবান সরকার। বই পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা কমিটির এক সদস্য সরাসরি জানিয়েছেন, “নারীদের লেখা কোনো বই পড়ানো যাবে না।”
তালিবান ক্ষমতায় ফেরার আগে বিচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী এবং বর্তমানে নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত লেখক জাকিয়া আদেলি এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত নন। তার মতে, গত চার বছরে তালিবান যা করছে, তাতে নারী শিক্ষার পথ রুদ্ধ হওয়া এবং চিন্তাভাবনা দমনের এই ধারা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ইরানি প্রভাব ঠেকানোর চেষ্টা
শুধু নারীদের নয়, আফগান পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের প্রায় ৩১০টি বই। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো “ইরানি বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঠেকানো।”
তবে এক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই আফগান উচ্চশিক্ষাকে বৈশ্বিক একাডেমিক জগতের সঙ্গে যুক্ত করত। এগুলো বাদ দেওয়া মানে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি।”
আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার সংকট
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক জানান, তালেবান সরকারের চাপানো নতুন নীতির কারণে তারা বাধ্য হচ্ছেন নিজেদের উদ্যোগে পাঠ্যপুস্তকের অধ্যায় তৈরি করতে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সেই উদ্যোগ আদৌ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারবে কি না।
শিক্ষায় ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞা
তালিবান সরকার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে নারীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে নারীদের শিক্ষাগ্রহণ নিষিদ্ধ, ধাত্রীবিদ্যা কোর্স বন্ধ হওয়ায় পেশাগত প্রশিক্ষণের শেষ সুযোগটিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এবার সরাসরি নারীবিষয়ক পাঠ্যও নিষিদ্ধ হলো।
এছাড়াও সম্প্রতি তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা “অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধের” কারণ দেখিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষাকে আরও সংকটে ঠেলে দেবে। নারীরা শুধু শিক্ষার সুযোগ হারাচ্ছেন না, বরং তাঁদের চিন্তা, মতামত ও লেখালেখির অধিকারও দমিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি আফগান একাডেমিক পরিমণ্ডলকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে।