কঠিন সময়েও ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব অটুট, এসসিও বৈঠকের মঞ্চে প্রকাশ্যে মোদীকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন পুতিনের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: চিনে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলন ঘিরে আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্কে তৈরি হলো নতুন সমীকরণ। একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কচাপ, অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উষ্ণ আলাপ আন্তর্জাতিক মহলে নতুন বার্তা দিল।
এসসিও বৈঠকের মঞ্চে পুতিন প্রকাশ্যে মোদীকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেন। এমনকি নিজের অত্যাধুনিক লিমোজিন গাড়িতে মোদীকে চড়ান। রীতিমতো মোদীর জন্য ১০ মিনিট অপেক্ষা করেন পুতিন। গাড়িতে বসে ৫০ মিনিট আড্ডা দেন দুই রাষ্ট্রনেতা। সেই দৃশ্য ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে ভারত-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বিশ্ব কূটনীতির অঙ্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
অন্যদিকে, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক রাশিয়া থেকে ভারত নিয়মিত তেল আমদানি করছে। এই অবস্থাতেই মার্কিন প্রশাসন ভারতের উপর একের পর এক শুল্ক আরোপ করেছে। প্রথমে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ, পরে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়। তবুও দিল্লি পিছিয়ে যায়নি। বরং দেশীয় বাজার ও বিকল্প কৌশলের উপর ভরসা করে স্বাধীন অবস্থান বজায় রেখেছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মোদী শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তাও দেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি পুতিনকে বলেন—“মানবতার খাতিরে এই যুদ্ধ বন্ধ করে স্থায়ী শান্তির পথ খুঁজে বের করতে হবে।” মোদীর বক্তব্যে স্পষ্ট, রাশিয়ার কৌশলগত সহযোগী হয়েও শান্তির পক্ষে ভারতের অবস্থান অটল।
এদিকে হোয়াইট হাউস সতর্ক করে দিয়েছে, মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য চালালে ভারতের উপর দ্বিতীয় দফার নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। মার্কিন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পিটার নাভারো মন্তব্য করেছেন, “ইউক্রেনে শান্তির রাস্তা দিল্লি দিয়েই যায়।” ওয়াশিংটনের এই অবস্থান থেকেই পরিষ্কার যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত সরকার অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, মার্কিন শুল্ক আরোপ অন্যায্য এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনের পরিপন্থী। অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে দিল্লি আত্মবিশ্বাসী।
সব মিলিয়ে, এসসিও বৈঠকে মোদী-পুতিন সাক্ষাৎ শুধু দু’দেশের সম্পর্কের উষ্ণতাই বাড়ায়নি, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের বাড়তি গুরুত্বও বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ সরিয়ে রেখে ভারত নিজস্ব স্বাধীন অবস্থান ধরে রাখতে চাইছে।


