Monday, December 15, 2025
Latestখেলা

Project Mahadeva: ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির লক্ষ্যে মেসির হাতে ‘প্রজেক্ট মহাদেবা’ উদ্ধোধন মহারাষ্ট্র সরকারের

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা আর দর্শকদের করতালির মধ্যেই রবিবার মহারাষ্ট্রে এক ঐতিহাসিক ক্রীড়া উদ্যোগের সূচনা করলেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার ও বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি। রাজ্যজুড়ে যুব ফুটবল প্রতিভা খোঁজা ও বিকাশের লক্ষ্যে শুরু হল ‘প্রজেক্ট মহাদেবা’, যা মহারাষ্ট্রের ফুটবল ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পিত।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। মেসিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাকে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা গর্বিত। আপনি আজ ৬০ জন প্রতিভাবান শিশুর সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০৩৪ সালে তারাই ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়াবে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। একদিন তাদেরই দেখা যাবে ফিফার মঞ্চে।”

মেসির উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মাত্রা দিলেও, প্রকৃত গুরুত্ব ছিল এই দীর্ঘমেয়াদি ও কাঠামোবদ্ধ ফুটবল উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণায়। প্রজেক্ট মহাদেবা কোনও একদিনের প্রতিভা সন্ধান কর্মসূচি নয়; বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ফুটবল অ্যাকাডেমি মডেল, যার লক্ষ্য মহারাষ্ট্রের ৩৬টি জেলা থেকেই প্রতিভা চিহ্নিত করে তাদের ধারাবাহিকভাবে গড়ে তোলা।

মহারাষ্ট্র সরকার ও ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (WIFA)-এর যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে ৬০ জন ছেলে ও মেয়ে ফুটবলার বাছাই করা হবে। মূলত অনূর্ধ্ব-১৩ ও অনূর্ধ্ব-১৪ বয়সের এই খেলোয়াড়রা আগামী পাঁচ বছর ধরে পাবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, পড়াশোনা, পুষ্টি সহায়তা এবং মানসিক কন্ডিশনিং। ভারতীয় ফুটবলে যেখানে অধিকাংশ উদ্যোগই স্বল্পমেয়াদি, সেখানে এই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা।

প্রজেক্ট মহাদেবার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গি। আধুনিক ফুটবল প্রশিক্ষণ পদ্ধতির পাশাপাশি থাকছে স্পোর্টস সায়েন্স, ব্যক্তিগত পুষ্টি পরিকল্পনা, চোট প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তোলার বিশেষ প্রশিক্ষণ। ছোটবেলা থেকেই পেশাদার পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেলে খেলোয়াড়দের মধ্যে শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাস ও জয়ের মানসিকতা তৈরি হবে এটাই এই প্রকল্পের মূল দর্শন।

এই অ্যাকাডেমির আবাসিক কাঠামো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত গ্রামীণ ও পিছিয়ে থাকা জেলার খেলোয়াড়দের জন্য। দীর্ঘদিন ধরেই মানসম্মত কোচিং ও সুযোগের অভাবে বহু প্রতিভা হারিয়ে গেছে। কেন্দ্রীভূত আবাসিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য কমিয়ে সকল প্রতিভাকে সমান সুযোগ দেওয়াই লক্ষ্য। যোগ্য খেলোয়াড়দের জন্য থাকছে স্কলারশিপ, যাতে অর্থের অভাবে কোনও প্রতিভার পথ রুদ্ধ না হয়।

মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এই উদ্যোগকে ‘সিস্টেমস-ফার্স্ট’ প্রকল্প বলে বর্ণনা করেছেন। ভারতীয় ফুটবলের বড় সমস্যা বরাবরই ছিল সুসংহত কাঠামোর অভাব, জেলা স্তর থেকে জাতীয় স্তর পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট পথরেখা ছিল না। WIFA-র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে মহারাষ্ট্র সরকার।

লিওনেল মেসির প্রতীকী সূচনা এই প্রকল্পকে শুধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই দেয়নি, বরং এক শক্তিশালী বার্তাও দিয়েছে। মহারাষ্ট্র ফুটবলে বড় স্বপ্ন দেখছে, তবে ভিত্তি মজবুত করেই। তরুণ খেলোয়াড় ও তাদের পরিবারের কাছেও এটি একটি আশ্বাস, যে ফুটবল এখন আর শুধু অনিশ্চিত স্বপ্ন নয়, বরং একটি সমর্থিত ও পরিকল্পিত কেরিয়ার পথ।

সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে দেখলে, প্রজেক্ট মহাদেবা সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আশাব্যঞ্জক রাজ্য-নেতৃত্বাধীন ক্রীড়া উদ্যোগ। মেঘালয়ের মতো রাজ্যগুলির ফুটবল অবকাঠামো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মহারাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ স্পষ্ট করে দিচ্ছে টেকশই সাফল্যের শুরুটা হয় একেবারে শিকড় থেকে।

৫ বছরের প্রতিশ্রুতি, বহুমাত্রিক সহায়তা এবং রাজ্যজুড়ে প্রতিভা অনুসন্ধান সবমিলিয়ে প্রজেক্ট মহাদেবা মহারাষ্ট্রের ফুটবল মানচিত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।