যুবভারতীকান্ড থেকে শিক্ষা! ‘গঙ্গাসাগর মেলায় কোনওভাবেই ‘ভিআইপি কালচার’ বরদাস্ত নয়’, সাফ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: গঙ্গাসাগর মেলাকে নির্বিঘ্ন ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে আগাম প্রস্তুতিতে কোমর বেঁধেছে রাজ্য প্রশাসন। ২০২৬ সালের গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হবে আগামী ১০ জানুয়ারি, চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। মকর সংক্রান্তির দিন, অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি সবচেয়ে বেশি পুণ্যার্থীর সমাগম হবে বলে প্রশাসনের অনুমান।
মেলা শুরুর আগে সোমবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের প্রস্তুতি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, গঙ্গাসাগর মেলায় কোনওভাবেই ‘ভিআইপি কালচার’ বরদাস্ত করা হবে না। লাল বাতির গাড়ির জন্য সাধারণ পুণ্যার্থীদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সাফ বক্তব্য, গঙ্গাসাগর মেলা সাধারণ মানুষের, তাই তাঁদের সুবিধা ও সুরক্ষাই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
চলতি বছরের শুরুতে প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে বাড়তি সতর্ক রাজ্য সরকার। ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যায় শাহি স্নানের সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৩০ জনের মৃত্যু এবং ৯০ জনের বেশি আহত হন। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই গঙ্গাসাগরে নিরাপত্তায় কোনও রকম ফাঁক রাখতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী।
প্রস্তুতি বৈঠকে ভিড় নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দিচ্ছে প্রশাসন। মেলা চত্বর, কপিলমুনি আশ্রম ও স্নানঘাটে নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হবে ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই স্বেচ্ছাসেবকেরা যাত্রাপথ থেকে সাগর তট পর্যন্ত পুণ্যার্থীদের গাইড করবেন। ভিড়ের মধ্যে কেউ হারিয়ে গেলে বা কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুণ্যার্থীদের হাতে দেওয়া হবে বিশেষ আইডি কার্ড ও রিস্ট ব্যান্ড।
পুণ্যার্থীদের সুরক্ষায় এবারও বিমা ব্যবস্থার ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। যাত্রাপথে বা মেলা প্রাঙ্গণে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পরিবহণ ব্যবস্থাও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য প্রায় ২৫০০টি বাস নামানো হবে। জলপথে পারাপারের জন্য থাকছে ২৫০টি লঞ্চ ও ২১টি জেটি। মুড়িগঙ্গা ও সাগর এলাকায় ড্রেজিংয়ের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেলা পরিচালনায় যাতে কোনও গাফিলতি না থাকে, সে জন্য একাধিক মন্ত্রীকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে সরাসরি মেলা প্রাঙ্গণে কাজ শুরু করবেন। গ্রাউন্ড জিরো থেকে পরিস্থিতি তদারকির দায়িত্বে থাকবেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, বেচারাম মান্না, পুলক রায়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী ও মানস ভুঁইয়া। কলকাতা থেকে সামগ্রিক মনিটরিং ও সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও ব্রাত্য বসু।
বৈঠকে উপকূলবর্তী এলাকার নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুলিশকে বাড়তি নজর দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। মাছ ধরতে গিয়ে অনেক সময় মৎস্যজীবীরা ভুল করে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়েন। এই ধরনের ঘটনার রুখে দেওয়া এবং সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী।
সব মিলিয়ে, গঙ্গাসাগর মেলা যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে রাজ্যের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করে, তার জন্য প্রশাসনিক সমন্বয় ও সতর্কতায় কোনও খামতি রাখতে চান না মুখ্যমন্ত্রী। খুব শীঘ্রই তিনি নিজে গঙ্গাসাগরে গিয়ে প্রস্তুতির কাজ খতিয়ে দেখবেন বলেও জানা গিয়েছে।


