Wednesday, June 26, 2024
আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে রাতের অন্ধকারে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হলো শতাধিক হরিজন হিন্দুদের বাড়ি, হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বংশাল থানাধীন ৫ হাজারের অধিক হরিজন হিন্দু সম্প্রদায় দীর্ঘ ২০০ বছরের বেশী সময় ধরে বসবাস করছিল। ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যাবিষ্টার ফজলে নূর তাপস (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়) স্থানটিতে মার্কেট বানানোর ঘোষণা দিয়ে রাতের অন্ধকারে শতাধিক বাড়ী ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। সকল হিন্দু হরিজন সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদ করে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। শতাধিক হিন্দু বাড়ী ঘর হারিয়ে সন্তান সন্ততি নিয়ে তারা রাস্থায় ফুটপাতে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। হিন্দু মহাজোট নেতৃবৃন্দ সকলকে তাদের বাড়ী ঘর পুননির্মাণ ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।

শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ঢাকার বংশাল থানাধীন মিরন জিল্লা হিন্দু পল্লীর (হরিজন পল্লী) শতাধিক বাড়ীঘর ভাংচুর, দরজা জানালা আসবাবপত্র ভাংচুর লুঠপাঠ ও উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। মানববন্ধন শেষে হিন্দু মহাজোট ঢাকা মহানগরের সহ সভাপতি শ্রী প্রদীপ দাস হেলার সভাপতিত্বে এক পথ সভায় বক্তব্য রাখেন হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডঃ দীনবন্ধু রায়, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডঃ প্রদীপ কুমার পাল, মহাসচিব অ্যাডঃ গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ প্রতিভা বাকচী, যুগ্ম মহাসচিব ডাঃ হেমন্ত দাস, বিপুল বিশ্বাস,সঞ্জয় ফলিয়া,, সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোর কুমার বর্মন, প্রেসিডিয়াম মেম্বার অভয় রায়, ঢাকা মহানগর সভাপতি শ্যামল ঘোষ, নারায়নগঞ্জ জেলা সভাপতি অ্যাডঃ রঞ্জিত দে, হরিজন সেবক সমিতির সভাপতি কৃষ্ণচরন কুঞ্জুমার, মহেশ লাল রাজ, সুদামা দাস, হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক মহাজোটের সভাপতি তোলন পাল, যুব মহাজোটের সভাপতি গৌতম সরকার অপু, নির্বাহী সভাপতি জয়দেব কুমার জয়, সাংগঠণিক সম্পাদক সঞ্জয় দেবনাথ, ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সজিব কুন্ডু, নির্বাহী সভাপতি উজ্জ্বল মালাকার, সাধারণ সম্পাদক নিলয় পাল, সাংগঠণিক সম্পাদক উৎপল ভৌমিক, কোষাধক্ষ পল্লব দাস, দপ্তর সম্পাদক সজিব দাস প্রমূখ। 

বক্তাগণ বলেন, ‘প্রায় ২ শত বছর ধরে হরিজন হিন্দু সম্প্রদায় বংশ পরম্পরায় এখানে বসবাস করছে। তারা পেশায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তাদের কারনেই আমরা ঢাকা শহরে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারছি। তারা একদিন কাজ বন্ধ রাখলে ঢাকা শহর মানুষের বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়বে, মানুষ ঢাকা পালিয়ে যাবে। সারাদেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হলেও হরিজন পল্লীর মানুষজন এখনো উন্নত অন্ন বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষা লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছে। অথচ বহুকাল আগেই উন্নত বাসস্থান শিক্ষা সহ মৌলিক চাহিদাগুলো পুরন করা দরকার ছিল। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন তাদের সুযোগ সুবিধা তো নিশ্চিত করেই নাই; উপরন্তু বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা হরিজনদের উচ্ছেদ করেছে এবং করছে। এর আগে ধলপুর থেকে তাদেরকে অমানবিকভাবে উচ্ছেদ করেছে। চট্টগ্রামে রবিদাস পাড়া উচ্ছেদ করেছে। এখানেও রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষের উপর সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে ভাংচুর করেছে স্থানীয় কমিশনার। শতাধিক বাড়ীঘর ধ্বংস করে দেয়েছে। লুঠপাঠ করা হয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চা সহ কয়েক হাজার মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের থাকতে দিয়েছেন, তাদের খাওয়া পড়ার বন্দোবস্থ করেছেন। সারাদেশে গৃহহীনদের গুচ্ছগ্রাম করে ঘর দিয়েছেন। অথচ যাদের কারনে এই ঢাকা শহরে সভ্য মানুষগুলো বসবাস করতে পারছে, সরকার তাদেরকে উচ্ছেদ করছে। বাংলাদেশের আপামোর জনসাধারন ও ঢাকাবাসীর দাবী হরিজন পল্লী থেকে কাউকেই উচ্ছেদ করা যাবে না বরং সেখানে বহুতল ভবন করে তাদেরকে উন্নত বাসস্থান ও মৌলিক চাহিদা পূরনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সংগে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ কর্তৃক গোপালগঞ্জে জোড় পূর্বক ও ভয়ভীতি দেখিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিকট থেকে কেড়ে নেয়া সম্পত্তির দলিল বাতিল পূর্বক স্ব স্ব মালিকগণের নিকট ফেরৎ দিতে হবে। বিভিন্ন স্থানে মন্দর ও প্রতিমা ভাংচুরকারীদের বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার এবং সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পূন প্রতিষ্ঠার দাবী জানান।