Saturday, December 13, 2025
Latestদেশ

Justice GR Swaminathan: প্রদীপ প্রজ্বলনের পক্ষে রায়, বিচারপতি স্বামীনাথনকে অপসারণের দাবি বিরোধী সাংসদের

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি জি আর স্বামীনাথনকে অপসারণের দাবি জানিয়ে লোকসভার স্পিকারের কাছে ১২৩টি স্বাক্ষর সংবলিত একটি নোটিশ জমা দিয়েছেন বিরোধী সাংসদরা। তিরুপ্পরাঙ্কুন্দ্রম পাহাড়ে দীপম প্রজ্বলন নিয়ে বিচারপতি জি.আর স্বামীনাথনের রায়কে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে। হিন্দুদের ধর্মীয় অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তুলেছেন INDIA জোটের শতাধিক সাংসদ।

কী নিয়ে বিতর্ক?

তিরুপ্পরাঙ্কুন্দ্রম আরুলমিগু সুব্রামনিয়া স্বামী মন্দিরের পাহাড়ের উপরে অনুষ্ঠিত শতাব্দীপ্রাচীন কার্তিগাই দীপম প্রজ্জ্বলনের দাবিতে মামলা দায়ের হয়। মাদুরাই বেঞ্চের বিচারপতি স্বামীনাথন ওই আবেদনের ভিত্তিতে নির্দেশ দেন, তিরুপ্পরাঙ্কুন্দ্রম পাহাড়ে কার্তিগাই দীপম প্রজ্জ্বলিত হবে। নিরাপত্তার জন্য সিআইএসএফ মোতায়েন থাকবে। এরপরেই শুরু হয় বিতর্ক। প্রথমে মন্দির কর্তৃপক্ষ কার্তিগাই দীপম প্রজ্জ্বলনের প্রস্তুতি নিলেও পরে তাঁরা পিছিয়ে যায়।

হিন্দু প্রথাকে স্বীকৃতি, আর সেটাই ‘অপরাধ’?

বিচারপতি স্বামীনাথন তাঁর নির্দেশে কোনও নতুন অধিকার সৃষ্টি করেননি। বরং বহুদিন ধরে প্রচলিত হিন্দু ধর্মীয় প্রথাকে সম্মান জানিয়ে প্রশাসনকে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দীপম প্রজ্বলনের অনুমতি দেন। কিন্তু তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক পরিবেশ, বিশেষত ডিএমকে-র প্রভাবশালী ড্রাভিডিয়ান মতাদর্শের সামনে তা একপ্রকার ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবেই দেখা হয়েছে।

সমালোচকদের মতে, এই রায় জনশৃঙ্খলা নয়, রাজনৈতিক শৃঙ্খলা নাড়া দিয়েছে। কারণ তামিলনাড়ু সরকার দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপের অভিযোগে সমালোচিত। সেই স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে রায় দেওয়াই বিচারপতির ‘অপরাধ’।

বিচারব্যবস্থাকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা?

রায় প্রকাশের পরপরই ১২৩ জন সাংসদ নোটিশে স্বাক্ষর করেন। মঙ্গলবার ডিএমকে-র সাংসদীয় দলনেত্রী কনিমোঝি, দলের লোকসভার নেতা টিআর বালু, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বড়রা লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে অপসারণের দাবিপত্রটি জমা দেন। বিচারপতি জি আর স্বামীনাথনকে অপসারণের জন্য ভারতের সংবিধানের ২১৭ অনুচ্ছেদ এবং ১২৪ অনুচ্ছেদের অধীন প্রস্তাবটি আনা হয়েছে।

তাদের অভিযোগ বিচারপতি ধর্মীয় আগ্রহে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন, বিচারপতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, তখন কেন নীরব ছিলেন সাংসদরা?

বিচারপতির মন্তব্যে হিন্দু প্রথা অবমাননার অভিযোগ উঠেছিল, তখন কেন সংবিধানের ১২৪ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করা হয়নি?

বিচারপতি স্বামীনাথন হিন্দুদের ধর্মীয় অধিকার পুনঃস্থাপন করতেই বা কেন এত তৎপরতা?

তারা বলছেন, এই উদ্যোগের প্রকৃত লক্ষ্য বিচারপতির নয়; বরং দেশের বিচারপতিদের জন্য ‘বার্তা’, হিন্দু অধিকারের পক্ষে রায় দিলে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেমে আসবে।

জাতপাতের রাজনীতির ছায়াও ঘন হচ্ছে

বিতর্কের আরেকটি স্তম্ভ বিচারপতির জাতিগত পরিচয়। স্বামীনাথন ব্রাহ্মণ। ডিএমকে-র দীর্ঘদিনের ‘ব্রাহ্মণ-বিরোধী’ রাজনীতির প্রেক্ষিতে তাই বহু বিশ্লেষক বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে এই সমন্বিত আক্রমণে জাতপাতের উপাদানও কাজ করছে।

সম্প্রতি বিচারপতি সেন্থিল কুমার নিয়ে এক নাগরিকের সমালোচনায় পুলিশ তৎপর হয়ে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু বিচারপতি স্বামীনাথনকে নিয়ে ড্রাভিডিয়ান স্তরে যেসব ব্যক্তিগত আক্রমণ হয়েছে, সেগুলিতে সরকার বা দলের তরফে কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

সংসদের শক্তিশালী হাতিয়ার ব্যবহারে দ্বিচারিতার অভিযোগ

অভিশংসন সংবিধানের সবচেয়ে শক্তিশালী শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া। সাধারণত এটি প্রয়োগ করা হয়,

গুরুতর দুর্নীতি, বিচারিক অনৈতিকতা, বা ক্ষমতার অপব্যবহারের ক্ষেত্রে।

এখানে অভিযোগ, বিচারপতি হিন্দু ধর্মীয় অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাই সমালোচকেরা বলছেন, এটি বিচারিক নৈতিকতার ইস্যু নয়, বরং মতাদর্শগত লড়াই।

‘একটি দীপম, আর তাতেই প্রকাশ পেল গভীর অস্থিরতা’

বিতর্কটির রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বহু আইনজীবী, ধর্মীয় সংগঠন ও সাধারণ নাগরিক মনে করছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে দেশে ধর্মীয় অধিকারের প্রশ্নে দ্বিচারিতা রয়েছে।

সংখ্যালঘু স্বার্থ রক্ষায় রায় দিলে বিচারক হন ‘প্রগতিশীল’। হিন্দু অধিকারের প্রশ্নে রায় দিলে বিচারক হন ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বা ‘অযোগ্য’।

একটি সাধারণ দীপম জ্বালানোর অনুমতি দিয়েই বিচারপতি স্বামীনাথন রাজনৈতিক ক্ষমতার বহুস্তরের অস্বস্তি প্রকাশ্যে এনে ফেলেছেন, এমনটাই বলছে পর্যবেক্ষক মহল।

তথ্যসূত্র: The Commune