Thursday, November 13, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

এবার জল যুদ্ধে জড়াচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান; নদীতে বাঁধ দিচ্ছে তালিবান

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: এবার জল যুদ্ধে জড়াচ্ছে পাকিস্তান- আফগানিস্তান। পাকিস্তানে প্রবাহিত কুনার নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত জলসম্পদ মন্ত্রী মোল্লা আব্দুল লতিফ মানসুর জানিয়েছেন, প্রধান ধর্মীয় নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ব্যক্তিগতভাবে এই প্রকল্পের নির্দেশ দিয়েছেন।

আফগান সরকারের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের জন্য বড় কূটনৈতিক ও পরিবেশগত উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে দুই দেশের সীমান্তে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির খবর আসছিল। এর মধ্যেই শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) কুনার নদীতে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এসেছে।

মন্ত্রী মানসুর বলেন, “আফগানদের নিজেদের জল নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে। এই নদী আমাদের ভূখণ্ড দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাই এর যথাযথ ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব।”

নদীর ভৌগোলিক ও কৌশলগত গুরুত্ব

কুনার নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৮০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। এর উৎস পাকিস্তানের চিত্রাল এলাকার হিন্দুকুশ পর্বতে। নদীটি দক্ষিণ কুনার ও আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশ পেরিয়ে আবার পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়ায় প্রবেশ করেছে। শেষ পর্যন্ত এটি জালালাবাদের কাছে কাবুল নদীর সঙ্গে মিশে পাকিস্তানে চিত্রাল নদী নামে পরিচিত হয়ে পাঞ্জাবের অ্যাটোকের কাছে সিন্ধু নদে মিলিত হয়েছে।

কুনার ও কাবুল (চিত্রাল) নদী পাকিস্তানের জন্য প্রাণস্বরূপ — বিশেষত খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলের সেচ, পানীয়জল ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে। নদীর প্রবাহ হ্রাস পেলে ওই অঞ্চলের কৃষি, পানীয় জল সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন সবকিছুই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চুক্তির অনুপস্থিতিতে কূটনৈতিক অচলাবস্থা

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে নদী বা জলবণ্টন নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই। ফলে আফগানিস্তান যদি কুনার নদীর ওপর বাঁধ তৈরি করে, পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনি পথে প্রতিরোধ করা কার্যত অসম্ভব হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ায় ‘জল কূটনীতি’-র নতুন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে এপ্রিল মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সীমান্ত সংঘর্ষের পর যখন ভারত ‘সিন্ধু নদ চুক্তি’ পুনর্বিবেচনার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, তখন আফগানিস্তানের এই পদক্ষেপ ইসলামাবাদের জন্য আরও চাপের কারণ হতে পারে।

আঞ্চলিক ভারসাম্যে প্রভাব

আফগানিস্তান যদি সফলভাবে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করে, তবে সেটি কেবল পাকিস্তানের জলের প্রবাহই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার জলের রাজনীতির ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে জলসংকট, কৃষি উৎপাদন হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়াতে পারে।

বর্তমানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক সীমান্ত সংঘর্ষ, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান ও বাণিজ্যগত টানাপোড়েনের কারণে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত। জল ইস্যুটি সেই উত্তেজনাকে আরও জটিল করে তুলবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।