Tuesday, December 16, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

Australia’s Bondi Beach: অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সৈকতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫, হামলাকারী ২ পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের বন্ডি সমুদ্রসৈকতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৫ জনে। রবিবার ভিড়ে ঠাসা সৈকতে নির্বিচারে গুলি চালায় দুই বন্দুকবাজ। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৪২ জন, যাদের মধ্যে দুই জন পুলিশ আধিকারিকও রয়েছেন।

হামলাকারীদের পরিচয় 

অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, হামলাকারী দু’জন বাবা ও ছেলে। নিহত ঘাতকের নাম সাজিদ আকরাম (৫০)। তার ২৪ বছরের পুত্র নাভিদ আকরাম পুলিশের গুলিতে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি এবং বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

সাজিদ আকরাম অস্ট্রলিয়ায় ফলের দোকানকার ছিলেন। রবিবার হামলার আগে গাড়ি চালিয়ে সমুদ্র সৈকতে এসেছিলেন নাভিদ। ঘটনাস্থল থেকে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স উদ্ধার করেছে পুলিশ।

অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৯৯৮ সালে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন সাজিদ। পরে রেসিডেন্ট ভিসা পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন।

১০ মিনিটের তাণ্ডব, উদ্ধার বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলার সময় বন্ডি সৈকতে অন্তত এক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সৈকতের একটি অংশে ইহুদিদের হনুক্কার উৎসব চলছিল। আচমকাই সেখানে ঢুকে পড়ে দুই আততায়ী ইহুদিদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয় ১৫ জনের। নিহতদের বয়স ১০ থেকে ৮৭ বছরের মধ্যে।

ঘটনাস্থল থেকে ছ’টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং দুটি আইইডি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্ফোরক দু’টি পরে নিষ্ক্রিয় করা হয়। হামলাকারীদের গাড়ি থেকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)-এর পতাকাও উদ্ধার হয়েছে।

আগেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত ছিল অস্ত্র

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিহত ঘাতক সাজিদ আক্রমের নামে ছ’টি আগ্নেয়াস্ত্রের বৈধ লাইসেন্স ছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, রবিবারের হামলায় সেই সব অস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশের পুলিশ কমিশনার মার লানিয়ন সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করেন, পিতা-পুত্র ছাড়া তৃতীয় কোনও ব্যক্তি এই হামলার সঙ্গে যুক্ত নন।

‘ইহুদি বিদ্বেষের ফল’, দাবি ইজরায়েলের

এই ঘটনাকে ইহুদি বিদ্বেষী মানসিকতার ফল বলে অভিহিত করেছেন ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিডিয়ন সার। 

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই হামলাকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করে একে দেশের ইতিহাসে ইহুদিদের উপর নজিরবিহীন আক্রমণ বলে বর্ণনা করেন। তিনি দিনটিকে ‘কালো দিন’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

আগ্নেয়াস্ত্র আইন আরও কড়া করার পথে অস্ট্রেলিয়া

হামলার পর অস্ট্রেলিয়ার আগ্নেয়াস্ত্র আইন আরও কড়া করার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ। সোমবারই বিষয়টি ক্যাবিনেটে তোলার কথা জানিয়ে তিনি দেশের যাবতীয় অস্ত্র সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, দ্রুত আইন সংশোধনের পথে হাঁটতে পারে অস্ট্রেলিয়া সরকার।

ভারতের কড়া নিন্দা, সংহতির বার্তা মোদীর

এই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বার্তায় তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। মোদী বলেন, এই শোকের মুহূর্তে ভারত অস্ট্রেলিয়ার জনগণের পাশে রয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অটুট এবং সব রকম সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারত দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তদন্ত চলছে

হামলার প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্ত চলছে সব দিক খতিয়ে দেখে। ইতিমধ্যেই ঘটনাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।