সারাক্ষণ ঘিরে থাকলেন কর্তা-মন্ত্রীরা! চড়া দামে টিকিট কেটেও দর্শকরা দেখতে পেলেন না মেসিকে, লন্ডভন্ড যুবভারতী স্টেডিয়াম
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: লিওনেল মেসির কলকাতা সফর ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, শনিবার তা রূপ নিল বিশৃঙ্খলা ও ক্ষোভে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসি পৌঁছোনোর পর থেকেই গোটা অনুষ্ঠান জুড়ে চরম পরিকল্পনাহীনতার ছবি ধরা পড়ে। প্রিয় তারকাকে এক ঝলক দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ দর্শকদের ভাঙচুর ও মাঠে নেমে পড়ার ঘটনায় কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় যুবভারতী স্টেডিয়াম।
শনিবার সকাল ঠিক ১১টা ৩০ মিনিট নাগাদ যুবভারতীর মাঠে ঢোকে লিওনেল মেসির গাড়ি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো ডি’পল। মাঠে ঢুকতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন মেসি। কিন্তু গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই অন্তত ৭০-৮০ জন মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরেন। মূলত নেতা-মন্ত্রী ও বিভিন্ন সংস্থার কর্তারাই মেসির চারপাশে ভিড় করেন। ক্যামেরা ও মোবাইল হাতে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে মেসির হাঁটার জায়গা পর্যন্ত ছিল না।
ফলে গ্যালারি থেকে সাধারণ দর্শকরা মেসি, এমনকি সুয়ারেজ বা ডি’পল কাউকেই দেখতে পাননি। টিকিট কেটে মাঠে আসা দর্শকদের একমাত্র ভরসা ছিল স্টেডিয়ামের তিনটি জায়ান্ট স্ক্রিন। কিন্তু সেখানেও মেসির উপস্থিতি কার্যত ধরা পড়েনি। ক্ষুব্ধ দর্শকরা তখনই ‘উই ওয়ান্ট মেসি’ স্লোগান দিতে শুরু করেন।
মোহনবাগান ও ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে মেসির পরিচয় পর্বেও একই ছবি দেখা যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে মাইক্রোফোনে বারবার আবেদন করতে হয়। তবু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মেসি মাঠে ছিলেন প্রায় ১৬-১৭ মিনিট, কিন্তু সেই পুরো সময়ে গ্যালারি থেকে তাঁকে একবারও স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি।
১১টা ৫২ মিনিট নাগাদ মেসিকে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহরুখ খান বা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মাঠে পৌঁছোননি। মেসি মাঠ ছাড়তেই দর্শকদের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। চড়া দামে টিকিট কেটেও প্রিয় তারকাকে দেখতে না পাওয়ায় শুরু হয় ভাঙচুর। গ্যালারির হোর্ডিং ছিঁড়ে ফেলা হয়, চেয়ার ভেঙে মাঠে ছোড়া হতে থাকে। মাঠে পড়তে শুরু করে বোতল।
এই সময় গ্যালারিতে পুলিশের উপস্থিতি কার্যত ছিল না। উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ফেন্সিংয়ের গেট ভেঙে শয়ে শয়ে দর্শক মাঠে ঢুকে পড়েন। প্রথমে দিশেহারা হয়ে পড়ে পুলিশ। পরে লাঠিচার্জ করে দর্শকদের মাঠ ছাড়াতে চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফের মাঠে ঢুকে পড়েন অনেকে। সব মিলিয়ে যুবভারতী কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীদের অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন নেতা-মন্ত্রী ও আয়োজকেরা। তাঁদের দাবি, মেসিকে ঘিরে রেখে সাধারণ দর্শকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেকের বক্তব্য, ফাঁকা মাঠে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মেসিকে মাত্র কয়েক মিনিট মাঠ পরিক্রমা করালেই সকলেই তাঁকে দেখতে পেতেন। কিন্তু এমন কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
পুরো অনুষ্ঠানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে চরম অব্যবস্থাপনা ও দূরদর্শিতার অভাব ছিল, তা স্পষ্ট। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারের সফর ঘিরে এমন বিশৃঙ্খল ছবি কলকাতার জন্য রীতিমতো লজ্জার বলে মনে করছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।


