উত্তরবঙ্গের বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ বললেন মমতা
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পাহাড় থেকে শুরু করে তরাই— সর্বত্রই বন্যা ও ভূমিধসের আতঙ্ক। শনিবার রাতের কয়েক ঘণ্টার অঝোর বৃষ্টি এবং ভুটান থেকে নেমে আসা জল মিলিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রবিবার সকাল থেকেই চলছে উদ্ধারকাজ। এ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সোমবার সকালে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দমদম বিমানবন্দর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দুর্যোগে মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। পাশাপাশি, মৃতদের পরিবারের একজনকে হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়ার কথাও জানান তিনি। তাঁর কথায়, “মৃত্যুর তো কোনও ক্ষতিপূরণ হয় না। কিন্তু যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের বাঁচার জন্য কিছুটা সহায়তা দিতে হবে।”
এদিন বিমানবন্দরে দাঁড়িয়েই কেন্দ্রের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, “এই বন্যা প্রকৃতির নয়, মানবসৃষ্ট। বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে জল আসছে, গঙ্গা উপচে পড়ছে। ডিভিসি (DVC) ইচ্ছেমতো জল ছাড়ছে। মাইথন, পাঞ্চেত থেকে যে জল ছাড়া হচ্ছে, তার জন্যই রাজ্য জলযন্ত্রণা ভোগ করছে। ভুটান-সিকিমের জলের সঙ্গে মিলে নাগরাকাটা, ধূপগুড়ির ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি হাসিমারা হয়ে নাগরাকাটা পর্যন্ত যাবেন এবং যতদূর সম্ভব দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখবেন। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্য তীব্র করা হয়েছে। দুর্যোগে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
পর্যটকরা যাতে এই দুর্যোগে সমস্যায় না পড়েন, সে দিকেও নজর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গে আটকে পড়া পর্যটকদের থেকে কোনও হোটেল কর্তৃপক্ষ টাকা নেবে না— এই নির্দেশ ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। সমস্ত খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, আটকে পড়া সাধারণ মানুষদেরও রাজ্যের উদ্যোগে নিরাপদে ঘরে ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
উত্তরবঙ্গের এই বিপর্যয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর রাজ্য সরকারের তৎপরতা ও সহানুভূতির প্রতীক বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। তবে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ— “এই পরিস্থিতি যদি সত্যিই ম্যান-মেড হয়ে থাকে, তবে তার দায় কার, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।”