Tuesday, October 7, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

আমেরিকায় H-1B ভিসায় যেতে এক লাখ ডলার ফি বাড়ালেন ট্রাম্প

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: দক্ষ কর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে এখন থেকে আরও এক লাখ ডলার অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন। ফলে জনপ্রিয় এইচ-ওয়ানবি ভিসা (H-1B Visa) প্রোগ্রামে আবেদনকারীদের খরচ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেল।

কী বলছে নতুন আদেশ?

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এইচ-ওয়ানবি ভিসার জন্য অতিরিক্ত ১ লক্ষ ডলার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু খাতের অভিবাসীদের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন “গোল্ড কার্ড” নামে একটি দ্রুত ভিসা ব্যবস্থাও চালু করেছে, যেখানে ন্যূনতম এক মিলিয়ন পাউন্ড ফি প্রদান করলে দ্রুত অনুমোদন পাওয়া যাবে।

নতুন নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, যদি নির্ধারিত অর্থ প্রদান না করা হয় কিংবা কর্মসূচির অপব্যবহার ধরা পড়ে, তাহলে আবেদনকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।

সরকারের যুক্তি

ভিসা প্রোগ্রামের সমালোচকরা দাবি করছেন, এইচ-ওয়ানবি ভিসা মার্কিন কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করছে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, “যদি কাউকে প্রশিক্ষণ দিতে হয়, তাহলে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা আমেরিকানদের প্রশিক্ষণ দিন। বিদেশ থেকে লোক এনে আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া বন্ধ করুন।”

তিনি আরও জানান, বড় বড় মার্কিন কোম্পানিগুলির সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তারা এতে রাজি।

বাস্তব চিত্র

২০০৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-ওয়ানবি ভিসার সংখ্যা বছরে ৮৫ হাজারে সীমিত রাখা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত আবেদন ফি বাবদ প্রায় ১,৫০০ ডলার দিতে হত। কিন্তু এবার হঠাৎ এক লাখ ডলার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অভিবাসী প্রত্যাশীদের জন্য বড় ধাক্কা।

ইতিমধ্যেই মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা সংস্থার (USCIS) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ অর্থবছরে এই ভিসার আবেদন প্রায় ৩,৫৯,০০০-এ নেমে এসেছে—যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

কারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবেন?

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, এইচ-ওয়ানবি ভিসার সুবিধাভোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অ্যামাজন, টাটা, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল এবং গুগল। ভারতের মতো দেশ, যেখান থেকে এই ভিসার আবেদন সবচেয়ে বেশি হয়, সেখানে উদ্বেগ তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া

ওয়াটসন ইমিগ্রেশন ল-এর প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী তাহমিনা ওয়াটসন বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আমার বহু ক্লায়েন্টের জন্য কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার মতো হবে। বিশেষ করে ছোট ব্যবসা এবং স্টার্টআপের মালিকরা ভয়াবহ চাপে পড়বেন।”

তিনি আরও বলেন, অনেক ছোট ও মাঝারি আকারের কোম্পানি বলছে, তারা দেশে উপযুক্ত কর্মী পাচ্ছে না বলেই বিদেশি প্রতিভাদের আনছে।

অন্যদিকে লিটলার মেন্ডেলসন পিসির অভিবাসন ও বৈশ্বিক গতিশীলতা বিভাগের চেয়ারম্যান জর্জ লোপেজ সতর্ক করেছেন, “এক লক্ষ ডলারের এই ফি প্রযুক্তি খাতসহ সব শিল্পে মার্কিন প্রতিযোগিতাকে স্থবির করে দেবে। অনেক কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কার্যক্রম সরানোর কথাও ভাবতে পারে।”

বিতর্ক

এইচ-ওয়ানবি ভিসা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান অতীতেও বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। ২০১৭ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিনি ভিসা যাচাই প্রক্রিয়া কঠোর করেন, যার ফলে ২০১৮ সালে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশে পৌঁছেছিল। ওবামার আমলে যেখানে এই হার ছিল ৫–৮ শতাংশ, আর বাইডেনের সময়ে তা ২–৪ শতাংশের মধ্যে নেমে আসে।