মহীশূরের মাধোয়াচর রোডে অবৈধভাবে দরগাহ নির্মাণ, সিটি কর্পোরেশনের নোটিশে বিতর্ক তুঙ্গে
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মহীশূরের মাধোয়াচর রোডে ঐতিহাসিক ১০১ গণপতি মন্দিরের একেবারে কাছেই নতুন দরগাহ নির্মাণের সিদ্ধান্ত। মহীশূর সিটি কর্পোরেশনের (MCC) জারি করা নোটিশকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর এমসিসি এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তকে মহীশূর এবং গোটা কর্ণাটকের হিন্দু সমাজ অবৈধ, সংবেদনহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে।
২০০৯ সালের সরকারি নির্দেশ অমান্য
হিন্দু সংগঠনগুলির অভিযোগ, কর্ণাটক সরকার ২০০৯ সালে এক নির্দেশ জারি করে, যাতে নতুন কোনও ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর লক্ষ্য ছিল অবৈধ জমি দখল এবং সাম্প্রদায়িক শান্তি বজায় রাখা। তবুও এমসিসি সেই নির্দেশ অমান্য করে দরগাহ নির্মাণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। হিন্দুদের মতে এটা আইনভঙ্গের শামিল।
নোটিশ বোর্ড লাগানো হয়নি
নিয়ম অনুযায়ী, নতুন নির্মাণ প্রস্তাব জনসমক্ষে আনতে সাইটে নোটিশ বোর্ড লাগানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। বরং বিজ্ঞপ্তি শুধু একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল—তাও আবার দশেরা উৎসব চলাকালীন সময়ে। স্থানীয় বাসিন্দা, মন্দির কর্তৃপক্ষ এমনকি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে কিছু জানেন না। হিন্দু সংগঠনগুলির মতে, গোপনে দরগাহ নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জমির রেকর্ডে অসংগতি
জমির মালিকানা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। ১৯৬৫ সালের সরকারি গেজেটে ১.৫ একর জমি “মহম্মদ গাউস, মহম্মদভাড়ি রোড, কে.আর. মহল্লা”–র নামে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে উল্লেখ রয়েছে।
হিন্দুদের দাবি, সেই সময় কোনও “মহম্মদভাড়ি রোড” বা “মাধোয়াচর রোড”–এর সরকারি নথি ছিল না। ফলে জমির শিরোনাম জাল বা ভুলভাবে আরোপ করা হয়েছে বলে সন্দেহ।
আয়কর নথিতে জমির আয়তন ৪,৫০০ বর্গফুট ধরা হলেও রাজস্ব হিসাব কষা হয়েছে মাত্র ৭০০ বর্গফুটে।
এই সব অসঙ্গতি দেখে হিন্দুরা জমির নথি পুনরায় ফরেনসিক পরীক্ষার দাবি তুলেছে।
আইনি জটিলতা
২০০২ সালে একটি দেওয়ানি আদালত জমিটি ওয়াকফ সম্পত্তি ঘোষণা করে এবং পরবর্তীতে হাইকোর্টও সেই রায় বহাল রাখে। তবে হিন্দুদের দাবি, মামলাটি এখনও উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তির আগে এমসিসি কর্তৃপক্ষ খাতা প্রদান ও নির্মাণ নোটিশ জারি করেছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি অবমাননা।
খাতা প্রদান ও নির্মাণ শুরুর অভিযোগ
হিন্দু সংগঠনগুলির অভিযোগ, দীর্ঘ ৬০ বছর খালি পড়ে থাকা জমির জন্য সম্প্রতি খাতা জারি করা হয়েছে। এমনকি ১৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে অনুমোদনের আগেই নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ নিয়ে এমসিসি ও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
মন্দিরের একেবারে কাছেই
প্রস্তাবিত দরগাহ সাইটটি অতি নিকটে অবস্থিত ১০১ গণপতি মন্দিরের। হিন্দুদের আশঙ্কা— মন্দিরের পূজা-আর্চনা ও উৎসব ব্যাহত হতে পারে। শোভাযাত্রা ও সমাবেশে বাধা আসতে পারে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক টি.এস. শ্রীবাস্তের অভিযোগ, এমসিসি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মতামত না নিয়েই পদক্ষেপ নিয়েছে। বিজেপি নেতারা একে সরাসরি “সংখ্যালঘু তোষণ” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, দশেরার সময় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আপত্তি এড়ানোর চেষ্টা হয়েছে।
হিন্দু সমাজের দাবি
হিন্দু সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে কয়েকটি স্পষ্ট দাবি তোলা হয়েছে—
1. অবিলম্বে দরগাহের নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে।
2. জমির সব নথি, গেজেট ও রাজস্ব রেকর্ড প্রকাশ্যে আনতে হবে।
3. ২০০৯ সালের সরকারি নির্দেশ কঠোরভাবে মানতে হবে।
4. যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া দেওয়া খাতা প্রত্যাহার করতে হবে।
5. স্থানীয় হিন্দু প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
6. মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে।
তথ্যসূত্র: The Commune