Thursday, April 25, 2024
সম্পাদকীয়

মহামারীতে দেশের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় নেতাজি

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: সুভাষচন্দ্র বসুকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই সময় কটকে কলেরা মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বেশ কিছু বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কটকে পৌঁছান। এরপর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মানুষের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। কোনও রোগীকে পরিবারের লোকেরাও ছেড়ে চলে গিয়েছেন, সেই রোগীর পাশে দাঁড়িয়েছেন সুভাষচন্দ্র বসু ও তাঁর বন্ধুরা। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও অল্প স্বল্প শিখে নিয়েছিলেন।

 

🗓️ ১৯২২ সাল 🗓️

এক বিরাট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় উত্তরবঙ্গ। সেপ্টেম্বরের প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ব্রহ্মপুত্রের জল আত্রাই নদী হয়ে ভাসিয়ে দিল গোটা উত্তরবঙ্গকে। ব্যাপক ক্ষতি হয় উত্তরবঙ্গের। বিঘার পর বিঘা ফসল নষ্ট হয়ে যায়। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রেললাইন ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। বিজ্ঞান কলেজে বন্যা সমিতির অফিস তৈরি করা হল। পাশে দাঁড়ালেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। স্বেচ্ছাসেবক, সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রীরা এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন .. নেতৃত্বে সুভাষচন্দ্র বসু। পরিস্থিতি সরেজমিনে নিজের চোখে দেখতে চলে এলেন উত্তরবঙ্গ। সেখানেও সমিতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তরুণ সুভাষচন্দ্র বন্যার মধ্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ত্রাণ বিলি করতেন।

এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা জানা যায় সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইজি গীতা বিশ্বাসের কাছ থেকে। ঘটনাটি তিনি শুনেছিলেন বিপ্লবী লীলা নাগের কাছ থেকে। উত্তরবঙ্গের ত্রাণকার্যে সুভাষচন্দ্র বসু-র সঙ্গে ছিলেন লীলা নাগ। একদিন তিনি দেখলেন যে ত্রাণশিবিরে সুভাষচন্দ্র বসু কাজ করছেন সেখানে চারিদিকে বন্যার জল। কিন্তু কাজে অবিচল সুভাষচন্দ্র বসু। হঠাৎ লীলা নাগ দেখলেন একটি সাপ সুভাষচন্দ্র বসুর গা ঘেষে চলে গেল। কিন্তু তাতেও সুভাষচন্দ্র বসু-র কাজে বিঘ্ন ঘটল না। লীলা নাগ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন পাশ থেকে সাপ চলে গেল আপনার ভয় করল না !! সুভাষচন্দ্র উত্তর দিয়েছিলেন, ভয় কিসের, সাপেদের ক্ষতি না করলে ওরা কিছু করে না। এমনটাই ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।

 

🗓️ তেতাল্লিশের মন্বন্তর 🗓️

তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল সরাসরি দায়ী ছিলেন এই ঘটনায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক সেনা ও যুদ্ধে নিয়োজিত কর্মীদের জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্য মজুদ করায় এই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। মজুদ করার কারণে হু হু করে বেড়ে যায় চালের দাম। একই সঙ্গে বাজারে তা দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। বাংলাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নৌকা ও গরুর গাড়ি হয় বাজেয়াপ্ত—নয় তো ধ্বংস করে ফেলে তারা। এতে চাল বা খাদ্য বিতরণ-ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। বাংলাজুড়ে প্রায় ৩০ লক্ষ লোক না খেয়ে মারা যান। নেতাজি তখন আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধান। বাংলায় এই মন্বন্তরের খবর শুনে অসম্ভব বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। জাহাজে করে কয়েকশো কুইন্টাল বাংলায় তিনি চাল পাঠান। কিন্তু ব্রিটিশরা সেই জাহাজ কলকাতা বন্দরে পৌঁছাতে দেয়নি।

তথ্যসূত্রঃ ড: জয়ন্ত চৌধুরী

© এক যে ছিলো নেতা